জলপাইগুড়িতে অভিনব বিয়ের নিমন্ত্রণ পত্র
নিজস্ব সংবাদদাতা ও কুশল দাশগুপ্তঃ সামনের মাসে বিয়ে। আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে আমন্ত্রণপত্র সেই আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে একটি করে ‘উপহার’ নামের পুস্তিকা। আর টবে লাগানো একটা গাছ। টবে সাঁটানো স্টিকারে লেখা রয়েছে ‘দুটি মন দিচ্ছে ডাক, তিলোত্তমা বিচার পাক।’ জলপাইগুড়ি হাকিমপাড়ার বাসিন্দা দিগন্ত রায়চৌধুরী এবং কলকাতা নিবাসী পৌলমী দাশগুপ্তর বিয়েতে এমনই অভিনব উপায়ে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।
আগামী ১০ ডিসেম্বর কলকাতায় দিগন্ত-পৌলমীর বিয়ে। জলপাইগুড়িতে ১৩ তারিখে রিসেপশন। সেই উপলক্ষ্যে পাত্রপাত্রীর সম্মতি নিয়েই দিগন্তর মা নীতা রায়চৌধুরী এই পরিকল্পনা করেছেন। আরজি করের ঘটনা দুই পরিবারকেই ব্যথিত করেছে। পাত্রপাত্রীর মা-বাবা হিসেবে তাঁদের মনেও প্রভাব ফেলেছে। পাত্রীর বাড়ি কলকাতায়। তিনি একটি ইংরেজিমাধ্যম কলেজের অধ্যাপিকা। হবু শাশুড়ি বললেন, ‘মেয়েদের জীবন গাছের মতোই সবুজ এবং জীবন্ত থাকুক। তাই এই স্লোগান।’
পৌলমী নিজেও আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘আরজি করের মতো মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতার রাস্তায় হেঁটেছি। আমরা সবাই চাই, ন্যায়বিচার আসুক। তাই বিয়ের আমন্ত্রণপত্রেও প্রতিবাদের ভাষা রয়েছে।’
পাত্র দিগন্ত রায়চৌধুরীর ভাবনাটাও একই। তাঁর কর্মস্থল ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার। পাত্র বললেন, ‘শুধু আরজি কর নয়। গোটা ভারতবর্ষে নারীদের সুরক্ষার দিকটা খুবই উদ্বেগের।’
এ তো প্রতিবাদের ভাষা। দিগন্ত-পৌলমীর বিয়েতে নস্টালজিয়াও রয়েছে। গাছের সঙ্গে একটি ‘উপহার’ নামে পুস্তিকা দেওয়া হচ্ছে। কী রয়েছে সেই বইয়ে? সেকাল এবং একালের নিমন্ত্রণবাড়িতে খাওয়া-দাওয়ার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। আগেকার দিনে স্কুলের কাঠের বেঞ্চে বসে খাওয়া-দাওয়া চলত। অনেক সময় কলাপাতায় খেতে গিয়ে মাংসের ঝোল গড়িয়ে অন্যের প্যান্টে পড়ত। এখনকার মতো ‘ব্যাংকোয়েট’ বুক করে নয়, নিজের বাড়ি নাহলে প্রতিবেশীর বাড়ির ফাঁকা জায়গায় প্যান্ডেল করে খাওয়া হত।
এখন কেটারারকে রান্না থেকে খাবার পরিবেশন, পুরো দায়িত্বই দেওয়া হয়। আগে কেটারারের চল ছিল না। পাড়ার দাদা, কাকু, মাসি-পিসিরাই খাবার পরিবেশন করতেন। ছোটদের দায়িত্ব থাকত সবার পাতে লবণ, লেবু এবং গ্লাসে জল দেওয়ার। বইটিতে বাংলার মনীষীদের খাবারের রকমভেদও তুলে ধরা হয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দ থেকে নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, উত্তমকুমার সকলের প্রিয় খাবারের তালিকা তুলে ধরা হয়েছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন