হোলিকা দহন হল সারা , কাল আমাদের দোল

  

হোলিকা দহনে উৎসর্গ করা হল   উত্তরাখন্ড , বিহার , ঝাড়খণ্ড থেকে আসা হাজার হাজার গোবরের কেক




বিশেষ সংবাদদাতা , কলকাতা , ২৪ মার্চঃ  সারা দেশ এখন মাতোয়ারা হোলি পালনের জন্য। আর আমাদের কাছে এই বিশেষ দিনটি দোল যাত্রা হিসেবে পালিত হয় । রঙিন এই উৎসব আরো রঙিন হয়ে ওঠে ফাগ এর রঙে । আবীর আর নানা রঙে আমরা পরস্পর ,পরস্পরকে সম্প্রীতির বাঁধনে বেঁধে ফেলি । এই হোলির আগের দিনটি একটি দিন । অনেকে এই দিনটিকে বলে থাকে ছোটি হোলি । এই দিন আমরা সবাই এই বাংলায় ন্যাড়া পোড়া করি । “ একটা কথা খুব প্রচলিত “ আজ আমাদের ন্যাড়া পোড়া , কাল আমাদের দোল , পুর্ণিমাতে চাঁদ উঠেছে , বল হরি বোল।“ এই দিনটিতে গাছের শুকনো পাতা জড়ো করে , নারকেল পাতা দিয়ে ঘরের মত বানিয়ে , সেই ঘরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার আগে থেকে এই প্রচলিত কথা গুলি গানের মত গেয়ে সবাই আনন্দ করতে থাকেন । এই ঘরটাকে বুড়ির ঘর বলে কেউ কেউ বলে থাকেন । আবার আরো বেশি পরিচিতি চাঁচর নামেও ।

এই ন্যাড়া পোড়া বা হোলিকা দহনের জন্য বিহার , ঝাড়খণ্ড , রাজস্থান ,উত্তরাখন্ড ,  উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের বহু মানুষ অপেক্ষা করে থাকেন । কেননা তাঁদের তৈরি গোবরের নানা জিনিষ এই সময়ে মানুষ কেনেন। এই সব ওই হোলিকা দহনের সময় উৎসর্গ করেন । এই গোবর দিয়ে তাঁরা প্রতীকী হিসেবে বানান হোলিকা । ভগবান বিষ্ণুর পাদুকা । সূর্য , তাঁরা । উনুন সমেত নানা জিনিষ। যেটা গৃহস্থালী সরঞ্জাম। অনেকে বলেন প্রতীকী এই সব হোলিকার ঘরের সরঞ্জাম। যা কিনা আগুনের শিখায় জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। সেই ছাই সবাই নিয়ে নেবেন বাড়িকে অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য।

পুরানে হোলি বা ডলের আগের দিনটিকে হোলিকা দহনের দিন হিসেবে বলা হয়েছে। এই দিনটিকে আবার অশুভ কে নাশ করে শুভের জয়যাত্রার দিন হিসেবেও বলা হয়ে থাকে  । কেউ কেউ এই দিনটিকে বলেন অন্ধকার থেকে আলোয় আসার দিন ।  

একটু পুরাণের কথায় আসা যাক। এদিন রাক্ষস নারী হোলিকাকে বধ  করার দিন।   ভাগবত পুরাণ মতে  হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ ও তাঁর  পিসি হোলিকাকে মনে করিয়ে দেয়। ভক্ত প্রহলাদ ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভক্ত। হিরণ্যকশিপু আবার ছিলেন বিষ্ণুর অন্যতম বিরোধী । তিনি চেয়েছিলেন নিজের সন্তানকেও হত্যা করতে পিছপা ছিলেন না । তিনি নানা উপায় অবলম্বন করেছিলেন । হোলিকাকে ব্যবহার করা ছিল , সেই উপায়ের একটি মাধ্যম । কথিত আছে , হোলিকার কাছে একটি এমন চাদর ছিল , ব্রহ্মার বরে সেই চাদরের মধ্যে থাকলে আগুন তাঁর গায়ে লাগবে না। হোলিকা হিরন্যকশিপুকে বলেন যে প্রহ্লাদকে ওই চাদর জড়িয়ে নিয়ে একটি দাহ্য ঘরের মধ্যে বসবেন । আর সেই ঘরে আগুন লাগিয়ে দিলে হোলিকা পুড়বেনা । কিন্তু প্রহ্লাদ পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। ভগবান বিষ্ণু এটি জানতে পেরে , হাওয়া দিয়ে হোলিকার গায়ের চাদর উড়িয়ে দেন । আর পরম ভক্ত প্রহ্লাদকে রক্ষা করেন । পুড়ে ছাই হয়ে যান হোলিকা । অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটে । সঙ্গে ছাই হয়ে যায় পাপ , অশুচি , লোভ , হিংসা ।  জয় হয় শুভ শক্তির ।  এরপর বিষ্ণুর নরসিংহ অবতারে হিরণ্যকশিপু বধ আমরা সবাই জানি ।

হোলিকা দহন নিয়ে আর একটি প্রচলিত কাহিনী আছে , শিব এই দিনে নাকি কামদেবকে ধ্যান ভাঙ্গাবার জন্য ত্রিনয়নের আগুনে ভস্ম করে দেন। সেই জন্য দক্ষিণ ভারতে তাই হোলিকা দহনকে ‘ কাম দহনম’ বলে থাকে । 



 সারা দেশের সঙ্গে আমাদের শহর কোলকাতাতেও বড় ধুমধাম করে এই হোলিকা দহন করা  হল  । সেই উপলক্ষে আমাদের শহরে এসে পৌঁছেছে হোলিকা দহনের সময় পুজো করার রীতি অনুসারে , গোবরের তৈরি নানা সামগ্রী। এগুলি সারা বছর ধরে বিহার , ঝাড়খণ্ড , রাজস্থান , উত্তরাখন্ডে তৈরি হয়। গোবরকে ছাঁচের মধ্যে ফেলে নানা আকার দেওয়া হয়। সূর্য , তারা , হোলিকার মূর্তি , এমনকি বিষ্ণুর খড়ম সমেত নানা আকার। এই গোবর নাকি মাখা হয় ধুনো দিয়ে।সেগুলি রৌদ্রে শুকানো হয় ।  হোলিকার জন্য যে ঘর বানানো হয় , সেই ঘরের মধ্যে পুজোর সময় দেওয়া হয় এগুলি । এর সঙ্গে থাকে একটি তলোয়ার । এছাড়াও এই হোলিকা দহনের সময় মাতা লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয় । সে জন্য দেওয়া হয় গমের শিষ , দেওয়া হয় নারকেল ও মিষ্টি । অনেকে বলেন ছোট সবুজ এলাচ , ও কর্পুর দিলে , সংসারে সম্পর্ক ভালো হয় ।  সেটাও দেওয়া হয় এই সময় ।

মন্তব্যসমূহ