দোলের দিন বৃষ্টির ভ্রূকুটি রাজ্য জুড়ে , আজ সারা দেশ জুড়ে চলছে হোলিকা দহনের উৎসব
কুশল দাশগুপ্ত ও বিশেষ সংবাদদাতা , শিলিগুড়ি ও কলকাতা , ২৪ মার্চঃ আর একদিন পরেই রঙের উৎসব হোলি। কিন্তুু অনেক বছর পরে বৃষ্টির কারনে দোলের আনন্দের আকাশে ঘন মেঘ। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী সোমবার শিলিগুড়িতে ৯২% বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে। অনেকেই এখন মোবাইলের মাধ্যমে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে যান। তাদের অনেকেই এখন জেনে গেছেন বৃষ্টির দাপটের কথা। যদিও তার মধ্যে আবীর কিংবা রঙ কেনার ভাটা পড়ে নি শিলিগুড়িতে। শিলিগুড়ির সব পাড়াতেই রঙের দোকান সাজানো হয়েছে। আর বিধান মার্কেট, হায়দারপাড়া এবং সুভাষপল্লীতে তো আছেই। বাচ্চাদের হাত ধরে বড়রাও উৎসাহী হয়ে পড়েছেন আবীর এবং পিচকারী কিনতে। এবারে শিলিগুড়িতে অন্যান্যবারের তুলনায় বিক্রি অনেকটাই কম বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। যাও বা তারা আশায় ছিলেন কিন্তুু বৃষ্টির কারনে সব মাটি হয়ে যেতে বসেছে। পরপর দুদিন ছুটি ঠিক কতটা উপভোগ করতে পারবে শহর শিলিগুড়ির মানুষ এখন এটাই দেখতে চান সকলে। তবে সবকিছু সময় বলে দেবে বলে মনে করছেন সবাই।অন্যদিকে রাজ্যের অন্য জেলাগুলিতেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে । তবে কলকাতাতে বৃষ্টির সম্ভাবনা সামান্যই।
এদিকে আজ সারা দেশ জুড়ে হোলিকা দহন উৎসব চলছে ।
সারা দেশ এখন মাতোয়ারা হোলি পালনের জন্য। আর আমাদের কাছে এই বিশেষ দিনটি দোল যাত্রা হিসেবে পালিত হয় । রঙিন এই উৎসব আরো রঙিন হয়ে ওঠে ফাগ এর রঙে । আবীর আর নানা রঙে আমরা পরস্পর ,পরস্পরকে সম্প্রীতির বাঁধনে বেঁধে ফেলি । এই হোলির আগের দিনটি একটি দিন । অনেকে এই দিনটিকে বলে থাকে ছোটি হোলি । এই দিন আমরা সবাই এই বাংলায় ন্যাড়া পোড়া করি । “ একটা কথা খুব প্রচলিত “ আজ আমাদের ন্যাড়া পোড়া , কাল আমাদের দোল , পুর্ণিমাতে চাঁদ উঠেছে , বল হরি বোল।“ এই দিনটিতে গাছের শুকনো পাতা জড়ো করে , নারকেল পাতা দিয়ে ঘরের মত বানিয়ে , সেই ঘরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার আগে থেকে এই প্রচলিত কথা গুলি গানের মত গেয়ে সবাই আনন্দ করতে থাকেন । এই ঘরটাকে বুড়ির ঘর বলে কেউ কেউ বলে থাকেন । আবার আরো বেশি পরিচিতি চাঁচর নামেও । পুরানে হোলি বা দোলের আগের দিনটিকে হোলিকা দহনের দিন হিসেবে বলা হয়েছে। এই দিনটিকে আবার অশুভ কে নাশ করে শুভের জয়যাত্রার দিন হিসেবেও বলা হয়ে থাকে । কেউ কেউ এই দিনটিকে বলেন অন্ধকার থেকে আলোয় আসার দিন । একটু পুরাণের কথায় আসা যাক। এদিন রাক্ষস নারী হোলিকাকে বধ করার দিন। ভাগবত পুরাণ মতে হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ ও তাঁর পিসি হোলিকাকে মনে করিয়ে দেয়। ভক্ত প্রহলাদ ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভক্ত। হিরণ্যকশিপু আবার ছিলেন বিষ্ণুর অন্যতম বিরোধী । তিনি চেয়েছিলেন নিজের সন্তানকেও হত্যা করতে পিছপা ছিলেন না । তিনি নানা উপায় অবলম্বন করেছিলেন । হোলিকাকে ব্যবহার করা ছিল , সেই উপায়ের একটি মাধ্যম । কথিত আছে , হোলিকার কাছে একটি এমন চাদর ছিল , ব্রহ্মার বরে সেই চাদরের মধ্যে থাকলে আগুন তাঁর গায়ে লাগবে না। হোলিকা হিরন্যকশিপুকে বলেন যে প্রহ্লাদকে ওই চাদর জড়িয়ে নিয়ে একটি দাহ্য ঘরের মধ্যে বসবেন । আর সেই ঘরে আগুন লাগিয়ে দিলে হোলিকা পুড়বেনা । কিন্তু প্রহ্লাদ পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। ভগবান বিষ্ণু এটি জানতে পেরে , হাওয়া দিয়ে হোলিকার গায়ের চাদর উড়িয়ে দেন । আর পরম ভক্ত প্রহ্লাদকে রক্ষা করেন । পুড়ে ছাই হয়ে যান হোলিকা । অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটে । সঙ্গে ছাই হয়ে যায় পাপ , অশুচি , লোভ , হিংসা । জয় হয় শুভ শক্তির । এরপর বিষ্ণুর নরসিংহ অবতারে হিরণ্যকশিপু বধ আমরা সবাই জানি ।
হোলিকা দহন নিয়ে আর একটি প্রচলিত কাহিনী আছে , শিব এই দিনে নাকি কামদেবকে ধ্যান ভাঙ্গাবার জন্য ত্রিনয়নের আগুনে ভস্ম করে দেন। সেই জন্য দক্ষিণ ভারতে তাই হোলিকা দহনকে ‘ কাম দহনম’ বলে থাকে ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন