রবিবাসরীয় বেহালার দিন প্রতিদিন - আজ হোলি বিশেষ , শান্তিনিকেতনে বসন্তোৎসব নিয়ে লিখলেন প্রবীণা আশ্রমিক , ডঃ সুমিত্রা খাঁ
হোলি বিশেষ
বসন্তোৎসব
ডঃ সুমিত্রা
খাঁ
উৎসব প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন – “ প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র
, দীন , একাকী – কিছু উৎসবের দিনে মানুষ বৃহৎ , সেদিন সে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একত্র
হইয়া বৃহৎ , সেদিন সে সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করিয়া মহৎ।“
সমস্ত দেশব্যাপী মানুষ যখন দোল উৎসব বা হোলি উৎসব নিয়ে মেতে
থাকে তখন শান্তিনেকেতনে পালিত হয় বসন্তোৎসব । ওই দিন নাচে , গানে , ফাগে , উচ্ছ্বাসে
, আনন্দে অপরূপা হয়ে ওঠে শান্তিনেকেতন। প্রধান ঋতু উৎসব গুলির মধ্যে এই উৎসবটি বিশেষ
ভাবে সকলকে আকর্ষিত করে ।
বসন্তোৎসবের আগের দিন রাত্রে বৈতালিক হয় । “নিবিড় অমা , তিমির
হতে --- “ গানটি গাইতে গাইতে আশ্রম পরিক্রমা হয় । পরদিন প্রভাতেও বৈতালিক গান ও আশ্রম
পরিক্রমা হয় – ‘ আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে ------ “ গানটি গাইতে গাইতে ।
এরপর শুরু হয় সকাল
৭.৩০ মুল অনুষ্ঠান । ছাত্র-ছাত্রীরা বাসন্তি
রঙের জামা-কাপড় পরে পলাশ ফুলের অলংকারে সেজে শোভাযাত্রায় যোগ দেয়। মৃদঙ্গ বাদ্যের সাথে গাওয়া হয় – “ ওরে গৃহবাসী খোল
, দ্বার খোল , লাগলো যে দোল “ গানটির সাথে সাথে , গানের তালে তালে নাচের মাঝে বেজে
চলে কারও কারও হাতে মন্দিরা , কারও কারও হাতে থাকে চিত্রিত লাঠি । নাচের তালে তালে চলে ‘ কাঠি নাচ ‘ । কোনও কোনও মেয়েদের হাতে থাকে ফাগ ভরা তাল পাতার ঠোঙ্গা
। এই নাচের শোভাযাত্রা আম্রকুঞ্জ ঘুরে , আম্রকুঞ্জের জহর বেদীতে এসে শেষ হয় শোভাযাত্রা
। বর্তমানে গৌর প্রাঙ্গনে এসে সকলে মিলিত হয় । শুরু হয় নাচ , গান , আবৃতি ও পাঠ । চলে
ঋতুরাজ বসন্তের আহ্বান – “ আজি দখিন দুয়ার খোলা… “ এভাবে গানের মধ্যে দিয়ে ।
শান্তিনিকেতনের প্রকৃতিতেও বসন্তের মাতামাতি । উচ্ছ্বসিত
প্রকৃতি ও ছেলেমেয়েদের আনন্দ মিলে মিশে এক মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি হয় । একটি তাম্রপত্রে
রাখা থাকে আবীর । অনুষ্ঠান ক্রমে পরিণতির দিকে এগিয়ে চলে গানের সুরে – “ রাঙিয়ে দিয়ে
যাও গো …” , তখনই শুরু হয় ফাগ খেলা । সমবেত স্বরে গেয়ে ওঠে –
“ যা ছিল কালো ধলো
রঙে রঙে রাঙা হল …।“
এখানে আবীর ছাড়া
অন্য কোন রঙ খেলা হয় না । এই মূল অনুষ্ঠানের পর বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা
নিজ নিজ দল বসে যান নানা জায়গায় । শুরু হয় অজস্র গানের ফোয়ারা , সঙ্গে নৃত্য ও পাঠ
। এ এক মনোরম দৃশ্য।
সন্ধ্যায় বিচিত্রানুষ্ঠান
কিংবা কোন নাটক অভিনয় হয় গৌর প্রাঙ্গনে মুক্ত মঞ্চে । পূর্ণিমার চাঁদের আলোর বন্যায়
, সংগীতে ও নৃত্যের রসধারায় এক অতি মনোরম স্বপ্নময় পরিবেশের সৃষ্টি হয় । এক আনন্দোৎসবের
মধ্যে দিয়ে শেষ হয় বসন্তোৎসবের অনুষ্ঠান ।
স্মৃতির মণিকোঠা
থেকে খুঁজে বের করতে হয় পুরন সেই দিনের কথাগুলো । বর্তমানে সময়ের সঙ্গে
তাল মিলিয়ে পালিত হয় বসন্তোৎসব । প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার্থে আনন্দোৎসবের মূল কাঠামো
বজায় রেখেই বসন্তোৎসব মহাসমারোহেই পালিত হয়। তবে পলাশের ব্যবহার খুবই নামমাত্র হয়ে
থাকে । অন্য ফুলেরই প্রাধান্য থাকে বেশি ।
( লেখিকা একজন প্রবীণা আশ্রমিক । তার স্মৃতিতে থাকা শান্তিনিকেতনের
বসন্তোৎসব , ‘ বেহালার দিন প্রতিদিন ‘ এর পাঠকদের জন্য )
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন