রবিবাসরীয় সাহিত্যের বেহালার দিন প্রতিদিন - প্রদীপ্ত চৌধুরীর ছোট গল্প / দিনকাল

 


দিনকাল

(গল্প নয়, সত্যি) 



প্রদীপ্ত চৌধুরী 


আমাদের অফিসের ঠিক পিছন দিকটায় হারুর ছোট্ট স্টেশনারি দোকান। তাছাড়া চা-ও বিলি করে ও। সঙ্গে ডিম-পাউরুটি, ঘুগনি, রান্না করা ম্যাগি। এসব গলাধ:করণ করতে আমরা প্রায়ই বিকেলের দিকে ওর দোকানে যাই। 


সেখানেই আলাপ হল হারুর ক্লাস থ্রি-তে পড়া পুঁচকে ছেলে সোমের সঙ্গে। রোগা ডিগডিগ করছে। মাথায় কদম ফুলের ছাঁট। কিন্তু মুখে সব সময় হাসি আর ফুটন্ত খই।


মাস কয়েক আগে বাবা মারা যাওয়ায় হারু দিন কয়েক দোকান বন্ধ রেখেছিল। খোলার পর একদিন দোকানে গেছি। দেখি খালি গায়ে একটা হাফ প্যান্ট পরে সোম দাঁড়িয়ে আছে।


ওকে বললাম,—কী রে, কী খবর তোর?

— দাদু তো মরে গেল।

—জানি তো। খুব মন খারাপ তোর, না?

—হ্যাঁ গো, আমায় খুব ভালোবাসত।


তারপর হঠাৎই বলল, —জান কাকু, আমি কখনও বিয়ে করব না।

আমি বললাম, —কেন রে? বিয়ে করবি না কেন?

—দাদু বারণ করেছে।

—হঠাৎ?

—একদিন আমার সাথে গল্প করছিল। সেদিনই বলেছে।

—দিদাকে বলেছিস?

—বলেছিলাম। দাদুর ওপর খুব রেগে গিয়েছিল।


ওর কথা শুনে হাসব না কাঁদব, বুঝতে পারছিলাম না।

বললাম, —তুই বিয়ে না করলে তো খুবই মুশকিল। ভেবেছিলাম, আমরা সবাই তোর বিয়েতে যাব, খুব মজা করে খাওয়া-দাওয়া করব।

সোম কিন্তু ওর সিদ্ধান্তে অটল। 

—না কাকু। বিয়ে আমি করবই না। দাদু বারণ করে গেছে। 


কী আর বলব? 

সরল বালকের নির্মল বুদ্ধির পরিচয় পেয়ে মনটা বেশ হালকা হয়ে যেত। দেখা হলেই ওর বিয়ে নিয়ে হামলে পড়তাম। হারু তখন কটমট করে আড়ে আড়ে ছেলের দিকে চাইত। 


এরপর বোধহয় দিন পনেরোও কাটেনি। একদিন সন্ধ্যায় দেখি, সোম ওর কাকার হাত ধরে কোথায় পড়তে যাবে বলে রেডি হয়েছে।

বললাম,—কী রে, বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে কিছু ভাবলি?

সোম হঠাৎ একটু চুপ করে গেল। তারপর বলল, —ঠিক আছে, করব।

আমি রীতিমতো অবাক! 

বললাম,—বাহ্, এ তো খুব ভালো কথা। তো কাকে বিয়ে করবি, কিছু ঠিক করেছিস?

সোম বলল,—না।

আমি বললাম,—ঠিক আছে, আমরাই তোর বউ খুঁজে দেব। কেমন বউ তোর পছন্দ বল।


সোম এবার যে বাক্যি শোনাল, তাতে তো আমার পেটে খিল ধরে যাওয়ার উপক্রম।

বলল,—তাহলে আমার জন্য তুমি একটা মডান (মডার্ন নয়) বউ দেখো।

আমি বললাম,—মডান মানে? একটু বুঝিয়ে বল।

সোম বলল,—মডান মানে ওই যে জিনসের প্যান্ট পরে, ছেঁড়া-খোঁড়া জিনস, ওইরকম।


আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। ওর কাকা এতক্ষণ পাশেই দাঁড়িয়েছিল। আমাদের কথাবার্তা শুনছিল। এবার হালকা করে ওর কদমফুলি মাথায় একটা গাঁট্টা মারল। তারপর টানতে টানতে নিয়ে চলল টিউশনে।

মন্তব্যসমূহ