রংমাটি - শিল্পের স্বর্গোদ্যান

 ক্যানভাসের জগত 

ঘুরে এলাম রংমাটিতে 







কাজল ভট্টাচার্য , কলকাতা, ৫ এপ্রিলঃ 

স্বর্গোদ্যানে না হয় একবার নিজেই ঘুরে আসিস। 
তোর বাড়ি থেকে কয়েক পা এগিয়ে গেলেইতো টেরাকোটার পারিজাত ফুটে থাকে রামকুমার মান্নার বাগানে। ছোট্ট পাঁচিলের ওপর বসে থাকে টেরাকোটার পাখি। সেই পাখির গায়ে গা লাগিয়ে বসে প্রকৃতির পাখি। এই বিচিত্র বাগানের নাম রংমাটি। সেখানেই পরপর তিনদিন, রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত চললো আর্ট ক্যাম্প। শহরের নামী অনামী একত্রিশজন শিল্পী ছুটে এসেছিলেন নরক গুলজার করতে। আমন্ত্রিত শিল্পীদের পাশাপাশি এসেছিলেন বেশকিছু অনাহূত শিল্পীরাও। সবার জন্যই অবারিত দ্বার। ঢালাও চা বিস্কুটের সঙ্গে দুপুরের খানাপিনা।



ভীষণ ইচ্ছে করতো তোকে নিয়ে যাই। হরিদেবপুরের মিশন মোড়ে নেমে হাঁটাপথে মিনিট দশেক। জায়গাটার কেতাবি নাম শান্তিনগর। আর্ট ক্যাম্পের আনন্দহাট। শিল্পীরা আপনমনে কাজ করে চলেছেন যে যার মতো। আত্মার আরাম মনের শান্তি। জগতের সেই আনন্দযজ্ঞে সামিল হতে পারার আনন্দটাই আলাদা। তোর সঙ্গে সেই আনন্দটা ভাগ করে নিতে পারলে বেশ হতো।



শহরের ঝাঁ চকচকে কর্পোরেট কালচার থেকে সহস্র হস্ত দূর। মহানগরীর কোলাহল সেখানে ঢুকতে মানা। রংমাটির পরিসরের ভেতরে ঢুকলেই এক অন্য জগত। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই স্তূপাকার করে রাখা টেরাকোটার শিল্পসম্ভার। রোদ ঝড় জল বৃষ্টিতে বেশকিছু ভাস্কর্যের গায়ে জমেছে শ্যাওলা। নারীমূর্তি থেকে নিয়ে দেবীমূর্তি। অজস্র ভাস্কর্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে চারদিকে। তারই ফাঁকে ফাঁকে গাছের ছায়ায়, রঙিন ছাতার তলায় বসে কাজ করে চলেছেন শিল্পীরা। কাজের অবসরে আড্ডা। ফের কাজে মন দেওয়া।

এঁদের মধ্যেই বসে পড়েছেন, এই শহরেরই আরেক বিশিষ্ট শিল্পী রূপচাঁদ কুন্ডু। তাঁর সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেড'- এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে রামকুমার মান্নার 'রংমাটি', তিনদিনের এই আর্ট ক্যাম্প আয়োজন করে। সকাল থেকেই সাজসাজ রব। রূপচাঁদ নিবিষ্টমনে শিল্পসৃষ্টিতে ব্যস্ত। ওদিকে সবার কাছে ঘুরে ঘুরে রামকুমার মান্না শিল্পীদের কাজে মদত করছেন। প্রয়োজনে নিজে হাতেকলমে কাজ করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন একতাল মাটি দিয়ে কী বৈচিত্রময় শিল্পসৃষ্টি করা যায়। ভাস্কর্যের আঙুলের আদরে তিলতিল করে রূপ নেয় এক মৃন্ময়ী। ভাস্কর্যের দুনিয়ার এই স্বর্গীয় স্বাদ থেকে বঞ্চিত থেকে গেলি তুই।

ছবি: দেবজ্যোতি রায়

মন্তব্যসমূহ