মঙ্গলের সন্ধ্যায় চিরতরে স্তব্ধ হলেন সন্ধ্যা

 

জীবন পথের যাত্রা  চিরতরে শেষ হল গীতশ্রী সন্ধ্যার  



 বিশেষ সংবাদদাতা , কলকাতা , ১৫ ফেব্রুয়ারিঃ     মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অকাল গণ অন্ধকারে ঢেকে গেল  বাংলার সংগীত জগত। চিরতরে চলে গেলেন স্বর্ণ যুগের প্রবাদ প্রতিম গায়িকা ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। হাসপাতাল সূত্রে পাওয়া খবর, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন  বাংলার সংগীত জগতের অন্যতম  নক্ষত্র সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে গভীরভাবে ব্যাথিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  এই মুহূর্তে তিনি রয়েছেন উত্তরবঙ্গ সফরে। উত্তরবঙ্গ  থেকে তিনি গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন , ‘‘আমি ভাবতে পারিনি মারা যাবেন। গতকাল রাতে অস্ত্রোপচারের পর খবর এসেছিল। কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। এত তাড়াতাড়ি এমনটা ঘটে যাবে তা বুঝতে পারিনি। আমরা যকৃতের চিকিৎসকে পাঠাব বলে ঠিক করেছিলাম। তখন জানতে পারলাম উনি আর নেই। কোভিড থেকে মুক্ত হওয়ার পর সব ঠিক ছিল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত। কী যে হয়ে গেল! উনি স্বর্ণালি সময়ের শিল্পী। সেই যুগের সকলেই চলে গিয়েছেন। উনি ছিলেন। উনিই শেষ সুরের ঝঙ্কার, সুরের স্পন্দন, গানের ইন্দ্রধনু। ওঁর গাওয়া কত গান মনে পড়ছে এখন।’’

আজ রাতে মরদেহ রাখা হবে পিস ওয়ার্ল্ডে । বুধবার ১২টার সময় দেহ নিয়ে রবীন্দ্র সদনে রাখা হবে সবার শ্রদ্ধা জানাবার জন্য । ৫টা পর্যন্ত ওখানে থাকবে সম্মান প্রদর্শনের জন্য। এর পর রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মান গান স্যালুট দিয়ে ওঁর শেষকৃত্য হবে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন , তিনি চেষ্টা করছেন তাড়াতাড়ি ফেরার। 

 এদিন বাংলা সঙ্গীত মহলের শোকপ্রকাশের পাশাপাশি সমবেদনা জানিয়ে শোক বার্তা দিয়েছেন রাজ্যের রাজ্যপাল , জগদীপ ধনকর। 

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় কলকাতার ঢাকুরিয়াতে ৪ অক্টোবর ১৯৩১ সালে রেলের কর্মকর্তা নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং হেমপ্রভা দেবীর ঔরসে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছয় সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন। তার পিতামহ একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন এবং পরিবারটি ১৯১১ সাল থেকে ঢাকুরিয়াতে বসবাস করতেন ।পণ্ডিত সন্তোষ কুমার বসু, অধ্যাপক এ টি ক্যানন এবং অধ্যাপক চিন্ময় লাহিড়ীর নিকট তিনি সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ নেন। তবে তার গুরু ছিলেন উস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খান, তার পুত্র উস্তাদ মুনাওয়ার আলী খান, যার অধীনে তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত আয়ত্ত করেছিলেন।  মনোরমা শর্মা অনুসারে, " নেপথ্য গানের উজ্জ্বল গৌরব অর্জনের পরেও একজন শাস্ত্রীয় গায়ক হিসাবে সন্ধ্যা, তার জনপ্রিয়তা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছেন।

যদিও তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে প্রশিক্ষিত, তবুও তার বেশিরভাগ কাজ বাংলা আধুনিক গানে। ১৯৫০ সালে তারানা চলচ্চিত্রে একটি গান দিয়ে তিনি মুম্বাইতে হিন্দি গান গাওয়া শুরু করেন। তিনি ১৭টি হিন্দি চলচ্চিত্রে নেপথ্য গায়িকা হিসেবে গান গেয়েছিলেন। ব্যক্তিগত কারণে ১৯৫২ সালে তিনি তার কলকাতা শহরের বাড়িতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৬৬ সালে তিনি বাঙালী কবি শ্যা মল গুপ্তকে বিয়ে করেন। শ্যামল তার অনেক গানের জন্য কথা লিখে দিয়েছিলেন।

তার সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি ছিল হেমন্ত মুখার্জীর সাথে, যার সাথে প্রাথমিকভাবে বাঙালি চলচ্চিত্রগুলির জন্য নেপথ্য গায়িকা হিসাবে তিনি বেশ কয়েকটি গান গেয়েছিলেন। হেমন্ত ও সন্ধ্যা বাংলার মহানায়ক উত্তম কুমার এবং তার অসংখ্য নায়িকা জোড়াগুলির নেপথ্য কণ্ঠস্বর হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন, বিশেষত অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের কণ্ঠে। হেমন্ত মুখার্জির রচনা ছাড়াও রবিন চট্টোপাধ্যায় ও নচিকেতা ঘোষের সঙ্গে তিনি অনেক কাজ করেন।

তথ্য সৌজন্যঃ উইকি 

মন্তব্যসমূহ