গঙ্গাসাগর মেলা বিশেষ
আদালতকে মান্য দিয়ে করোনা তৃতীয় ঢেউকে সামলে গঙ্গাসাগরের ঢেউতে আগামীকাল মোক্ষ স্নান
- সৌমাগ্নি দাস
গঙ্গা সাগর মেলা নিয়ে আদালতের নির্দেশকে মান্য করে আয়োজিত হয়েছে। করোনা সংক্রমণের উর্ধগতিকে সামলেই সরকারি তরফে নেওয়া হয়েছে নানা নিরাপত্তা মুলক ব্যবস্থা। সাগরতটে চলছে নজর দারি। ড্রোন ব্যবহার করে যেমন লক্ষ্য রাখা হচ্ছে , তেমনি ড্রোনের সাহায্যেই যেমন স্যানিটাইজেশন করা হচ্ছে, তেমনি করা হচ্ছে সচেতনা মুলক প্রচার। ইতিমধ্যেই কয়েক লক্ষ্য পুন্যার্থী স্নান সেরে ফেলে ছেন । সরকারি তরফে সাগর দ্বীপের প্রবেশের আগেই যেমন ষের নেওয়া হচ্ছে করোনা পরীক্ষার বিষয়টি , অন্য দিকে কারোর ভ্যাকসিন দেওয়া বাকি থাকলে , সেটাও দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাগরদ্বীপকে ‘ নোটিফায়েড’ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে । আর কঠোর করোনা স্বাস্থ্যবিধি প্রশাসনিক স্তরে প্রয়োগ করে স্নান থেকে কপিল মুণির আশ্রমে পুজো দেওয়া নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এদিকে আদালত যে কমিটিকে সমস্ত গঙ্গাসাগর মেলার পরিস্তিতি দেখার জন্য নিয়োগ করেছেন , তাঁরা ইতিমধ্যেই একটি প্রাথমিক রিপোর্ট জমাও দিয়েছেন। ফলে এই অতিমারি পরিস্তিতিতে রাজ্যের সরকারের কাছে গঙ্গাসাগর মেলার আয়োজনের যে চ্যালেঞ্জ , সেটি যাতে সফল হয় সেদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ ভাবে নজর রেখেছেন ।
৮ জানুয়ারি থেকে গঙ্গাসাগর মেলা শুরু হলেও ১৪ জানুয়ারি বিপুল সংখ্যক মানুষ এই মেলায় আসেন। কারণ বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে গঙ্গাসাগরে স্নান করলে ১০০টি অশ্বমেধ যজ্ঞের সমান পুণ্য পাওয়া যায়। এবার গঙ্গাসাগর স্নান মেলা চলবে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। তিথির গোলযোগে কারও মতে ১৪ জানুয়ারি মকর সংক্রান্তি, আবার কারও কারও মতে ১৫ জানুয়ারি পালিত হবে পৌষ পার্বণ বা মকর সংক্রান্তি। সূর্য রাশি পরিবর্তন করে মকর রাশিতে প্রবেশ করলে মকর সংক্রান্তি পালিত হয়। এ বছর সূর্য ১৪ জানুয়ারি দুপুর ২টো ২৭ মিনিটে মকর রাশিতে গোচর করবে। জ্যোতিষাচার্যদের মতে, সূর্যাস্তের আগেই যদি সূর্যনারায়ণ মকর রাশিতে প্রবেশ করে, তা হলে সেদিনই পুণ্যকাল থাকবে।
বাংলাতে একটা কথা খুব প্রচলিত ছিল , সব তীর্থ বার বার , গঙ্গা সাগর একবার। এর পিছনে কারণ ছিল অনেক। নদীপথ ছিল ভয়ংকর । আর জল জঙ্গলে ভরা সাগরতটের কপিলমুনির আশ্রম ছিল জনমানব শুন্য একটা সাগরতট। একজন সাংবাদিক হিসেবে আমার প্রথম গঙ্গাসাগর যাওয়া সেই আশির দশকের একেবারে গোড়ায়। সেই সময়ে গঙ্গা সাগরে যাবার আগে একটা ইনজেকশন নিতে হত। সবাই বলতেন , এটা নাকি কলেরার ইঞ্জেকসান । খুব ভয় হত। এর আগে অবশ্য গিয়েছি অন্য ভাবে , লুকিয়ে। মেদিনীপুরের রসুল পুর হয়ে। গঙ্গাসাগরে পৌষ সঙ্ক্রান্তির পুণ্য স্নান ছাড়াও , মাঘী পুর্ণিমার দিন মেদিনীপুরের মানুষের কাছে আরেকটি পুণ্য দিন। দল বেঁধে এসে তারা আজো পুজো দেন কপিল মুনির আশ্রমে। শতাব্দীর পর শতাব্দী এই প্রথা চলে আসছে। যাই হোক এই সময়ে মেলাও বসে এখনো। আর ভারত সেবাশ্রমে হয় শান্তি যজ্ঞ। আজো হাজারো হাজারো এই বাংলার পুন্যার্থীরা ছুটে আসেন এখানে। তবে সেই মেলাটি কিন্তু গঙ্গা সাগরের মত অত বড়ো না হলেও মানুষের মেলাটি কিন্তু খুব একটা ছোট হয় না।
যাই হোক। ফিরে আসি আগের কথায় । সেই ইঞ্জেশানের ভয় একটা মনের মধ্যে চেপে বসেছিল। কেননা মোটা সূচের গরু ছাগলের মত দেওয়ার প্রথার প্রচলিত রীতিকে ভয় আকারে মনের মধ্যে বসিয়ে নিয়েছিলাম। অনেকে যখন বললেন যে একজন চিকিৎসক যদি একটা শংসাপত্র দিয়ে দেয় , তাহলে আর লাগবে না। আমিও সেই পন্থা নিয়ে এড়িয়ে গিয়েছিলাম ঐ বিষয়টা। সেই সময় নামখানা আর চেমাগুড়ি ছিল সবচেয়ে প্রচলিত পথ। আর এই পথ খুব একটা সুগম ছিল না। বেশ কিছু নদীর মিলন স্থল পড়ত এই পথে। আর শীতের সময় কুয়াশায় ঢাকা থাকত বিশাল জলরাশির পথ। দেখা যেত না পাড় সমতে কিছুই। নৌ চালকদের অভিজ্ঞতায় ভর করেই এগিয়ে যেতে হত। যেখানেই টালমাটাল অবস্থা হত । দেখতাম অবাঙ্গালী সমেত বাঙ্গালীরাও গঙ্গা মাকে অনেক কিছু নিবেদন করছেন। এই পথে ছিল অনেক জলের মধ্যে থাকা চোরা ঘুর্ণী। যেটা একেবারে মোচার খোলের মত টেনে নিত জলের তলায় । সেই সময়ে মা অভয়া লঞ্চ ডুবির ঘটনাতো আমরা অল্প বিস্তর সবাই জানি। এরপর আশির দশকের শেষ ভাগ থেকে চেষ্টা চলতে থাকে হারউড পয়েন্ট থেকে পারাপারটা মানে ওপারে সাগরদ্বীপের কচুবেড়িয়া হয়ে কপিল মুনির আশ্রমে পৌছানো । এই রাস্তা ধরে যেতে লাগে ৩৩ কিলোমিটারের মত রাস্তাকে পেরোন। আর জলপথ অনেকটাই নিরাপদ। মুড়ি গঙ্গার একধারকে পেরিয়ে কচুবেড়িয়া পৌঁছান। গঙ্গার মুল ধারাটা অবশ্য অন্য ধার দিয়ে চলে গেছে। যারা পর্যটন বিলাশী তাঁদের জন্য এখানে রয়েছে লাইট হাউস , মায়া গোয়ালিনীর ঘাট , আর রয়েছে একটি খাল , যেটা কেটেছিলেন রাজাদের লালসার শিকার হয়ে এই দ্বীপে বন্দি থাকা সুন্দরী বিধবারা।
একটু দেখে নেওয়া যাক গঙ্গাসাগর মেলার এদিক ও ওদিক ।দক্ষিণ ২৪ পরগণার একেবারে শেষ প্রান্তে ছোটবড় ৫১টি দ্বীপ নিয়ে ৫৮০ বর্গ কিমি জুড়ে সাগরদ্বীপ। আর এই দ্বীপের আরেক নাম গঙ্গা সাগর। তার কারণ এখানেই গঙ্গার সঙ্গে মিলন ঘটেছে সাগরের। গঙ্গার মর্ত্যে আসা ও সগর রাজার পুত্রদের জীবনদানের লোকগাথাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে গঙ্গাসাগর তীর্থভূমি। কপিল মুনির আশ্রমটি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেলেও পরবর্তীকালে গড়ে ওঠা কপিল মুনির মন্দিরটিকে কেন্দ্র করে চলে আসছে মেলা। এই মেলাকে কেন্দ্র করে ভক্ত সমাগম হয়। রামায়ণ, মহাভারত থেকে বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস কিংবা রবীন্দ্রনাথের কবিতা, সর্বত্রই স্থান করে নিয়েছে গঙ্গাসাগর । বহু হিন্দু পুরাণেও গঙ্গাসাগরের উল্লেখ আছে কুম্ভমেলা, সে হরিদ্বার, প্রয়াগ, উজ্জয়িনী যেখানেই হোক, সব সময় মূল ভূখণ্ডে। অন্তত এক মাস ধরে। আর গঙ্গাসাগর মূল ভূখণ্ডের বাইরে এক দ্বীপ। এক দিকে ভাগীরথী, অন্য দিকে মুড়িগঙ্গা, আর এক দিকে বড়তলা নদী, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এই ভারতে জলবেষ্টিত দ্বীপে একটিই সর্বভারতীয় ধর্মীয় মেলা হয়, তার নাম গঙ্গাসাগর মেলা ।
নদীর ভাঙনে এখানকার বহু দ্বীপ চলিয়ে গেছে । ভাঙ্গন এই দ্বীপের একটি বড় সমস্যা। আর এখনকার একটা বড় সমস্যা হচ্ছে , নদিতে চড়া। একটা বড় সমস্যা। আগে মুড়িগঙ্গায় লোহাচরা নামে একটা দ্বীপ ছিল, এখন সেটি নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। ভাঙন ঘোড়ামারা দ্বীপকেও ধ্বংসের পথে নিয়ে গিয়েছে। যদি গঙ্গা সাগরের দিকে তাকানো যায় তাহলে দেখা যাবে গঙ্গাসাগর দ্বীপটিও এখন তিরিশ মাইল লম্বা দ্বীপ থেকে কমতে কমতে এখন মাত্র ১৯ মাইলে এসে ঠেকেছে। ।
১৮৩৭-এর ৪ ফেব্রুয়ারি ‘সমাচার দর্পণ’ পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে আমরা জানতে পারছি , ‘ভারতবর্ষের অতি দূর দেশ অর্থাৎ লাহোর, দিল্লি ও বোম্বাই হইতে যে বহুতর যাত্রী সমাগত হইয়াছিল তৎসংখ্যা ৫ লক্ষের ন্যূন নহে…। বাণিজ্যকারি সওদাগর ও ক্ষুদ্র দোকানদারেরা যে ভূরি ভূরি বিক্রয়দ্রব্য আনয়ন করিয়াছিল, তাহা লক্ষ টাকারো অধিক হইবে।’ ফলে সাগরতটের এই মেলা উনিশ শতকেও একটা আন্তর্জাতিক চরিত্রের ছিল। সমাচার দর্পণ মারফৎ আরো জানতে পারছি সে সময়ের সংবাদ প্রতিবেদনে , ‘ব্রহ্মদেশ হইতে অধিকতর লোক আসিয়াছিল।’ ফলে দেশীয় মানুষের সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাইরের মানুষের কাছেও বেশ পরিচিত এই গঙ্গাসাগর মেলা।
একসময়ে এই দ্বীপের নাম ছিল পত্তাল। যা আমরা বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীতে পাতাল হিসাবেই পেয়ে থাকি বলে মনে করেন গবেষকরা। জনমানবহীণ দ্বীপে বসতি স্থাপনের সর্ব প্রথম উদ্যোগ ওয়ারেন হেস্টিংসের। জঙ্গল কেটে লোক বসানোর জন্য ১৮১৯-এ ৩০ হাজার টাকা অনুমোদন করেন তিনি। বাঙালিরা গেল না, আরাকান থেকে পাঁচশো পরিবার বসতি গড়ল সেখানে। ১৮২২-এ দ্বীপে তৈরি হল রাস্তা, ১৮৩১-এ বসল টেলিগ্রাফের তার। আজকের , মানে বর্তমানের গঙ্গাসাগরের রূপদাতা কপিল মুনি নন, ওয়ারেন হেস্টিংস-ই সাগরতীর্থের মূল কারিগর ।
সে যাক , ফিরে দেখা যাক পুরাণের সেই কাহিনীকে। যে কাহিনীকে মেনে লাখো পূণ্যাতুর মানুষ , পাগলের মত ছুটে আসেন এই গঙ্গাসাগরতটে। সাগরমেলা চেহারা নেয় এক মিনি ভারতের। নানা রঙের , নানা বর্ণে এক অখন্ড ভারতের ছবি আঁকা হয় এই সাগরতটের ক্যানভাসে।
কিংবদন্তির সেই কাহিনী একবার দেখা যাক। এই গঙ্গাসাগরে সাংখ্যদর্শনের আদি-প্রবক্তা কপিলমুনির আশ্রম ছিল। সগর রাজার অশ্বমেধের ঘোড়াকে কেন্দ্র করে সাধনারত কপিল্ মুনিকে বিব্রত করেন সগর রাজার সন্তানেরা। কেননা দেবরাজ ইন্দ্র অশ্বমেধের ঘোড়াটিকে লুকিয়ে রেখেছিলেন কপিন মুনির আশ্রমে। সেই বিষয় কপিল্মুনির জানতেন না। অন্যদিকে সগর রাজার সন্তানেরা ভাবেন ,অশ্বমেধের ঘোড়া আটকে রেখেছেন কপিল মুনি। সেই কারণে তাঁরা আক্রমণে উদ্ধত হয় সাধনারত কপিল মুনিকে। সাধনায় ব্যাঘাত ঘটে মুনির। কপিলমুনির ক্রোধাগ্নিতে সগর রাজার ষাট হাজার পুত্র ভস্মীভূত হন এবং তাদের আত্মা নরকে নিক্ষিপ্ত হয়। সগরের পৌত্র ভগীরথ স্বর্গ থেকে গঙ্গাকে নিয়ে এসে সগরপুত্রদের ভস্মাবশেষ ধুয়ে ফেলেন এবং তাদের আত্মাকে মুক্ত করে দেন (রামায়ণ, বালকাণ্ড, ৪৩ অধ্যায়)। মহাভারতের বনপর্বে তীর্থযাত্রা অংশে গঙ্গাসাগর তীর্থের কথা বলা হয়েছে। পালবংশের রাজা দেবপালের একটি লিপিতে তার গঙ্গাসাগর-সঙ্গমে ধর্মানুষ্ঠান করার কথা বলা হয়েছে। লোক-কাহিনী অনুযায়ী এখানে কপিল মুনির একটি আশ্রম ছিল।
এই সাগরমেলায় কেন ছুটে আসেন পুন্যাতুর মানুষ জন।
অনেকে ভাবেন এই সাগর তটে সারাজীবণের পাপের থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তাই তাঁরা গরুর লেজ ধরে বৈতরণী পেরিয়ে যান এখানেই। আর একদল ভাবেন মাহেন্দ্রক্ষণের পুণ্য লগ্নে ( পৌষ সক্রান্তিতে ) সাগরের মকরস্নানে মুক্তি ঘটবে তাঁদের। পাপ ধুয়ে যাবে সব।
সন্তান লাভের আশায় একদল ছুটে আসেন আজো। নব দম্পতি নগ্ন দেহে আগুনের তাপে নিজেদের সেকে নেয় মোক্ষ স্নানের পর। গঙ্গা মা , কপিল
মুনি, আর ভগীরথকে পুজা অর্পণে সিদ্ধিলাভের আশায় পুজো দেন । এখানেই অনেকে তাঁদের প্রথম সন্তান গঙ্গাকে উৎসর্গ করার মানত করেন। আর প্রথম সন্তানকে কোন না কোন সময়ে , সে যে বয়েসেরই হোক না কেন, ছয় মাস থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে।এনে স্নানের মাধ্যমে উৎসর্গ করেন সন্তানকে।
অনেকে আবার তাঁদের স্বর্গীয় পুর্ব পুরুষদের পাপ মুক্তির বা শাপ মুক্তি , যাই বলা হোক না কেন , সেই উপলক্ষ্যে আদ্য শ্রাদ্ধ্যের কাজটি এখানেই করেন। তাঁরা মনে করে সগর রাজার সহস্র পুত্রের শাপ মুক্তি যে ভাবে তাঁর উত্তর পুরুষরা করেছিলেন , সেভাবেই মুক্তি দিচ্ছেন তাঁরা।
নাগা সন্যাসি সমেত বহু সন্যাসিরাও আসেন। যেমন ত্রিবেনী সঙ্গমে তাঁরা কুম্ভ মেলায় ছুটে যান। আর গঙ্গা আর সাগরের সঙ্গম স্থলে এসে তারাও মোক্ষ লাভের আশা করেন।
এত গেল পুন্যাতুর মানুষের কথা। সঙ্গে লাখ লাখ সাধারণ মানুষ , যারা সবাই পর্যটক , তাঁরা এখানে এখন ছুটে আসেন , পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ আঞ্চলিক মেলাকে সামনে থেকে উপভোগ করবেন বলে। তাঁরা এখানের নানা আঞ্চলিক সংস্কৃতির স্বাদ যেমন পান । তেমন দেখতে পান সারা ভারতের সব রাজ্যের মানুষদের, তাঁদের নিজের নিজের পোশাকে। আর মিশে যেতে পারেন সেই সব মানুষদের সংস্কৃতির মধ্যে।
দীর্ঘ বত্রিশ বছর এই গঙ্গাসাগরকে নিয়ে জানুয়ারি মাসটা পড়লেই ভাবতে শুরু করি। কেন জানেন , একটি মিনি ভারতকে দেখার সুযোগ মেলে এখানে। নানা রঙ , নানা ভাষা , নানা পোশাক , নানা রীতি সব মিলিয়ে এক অনন্য ক্যানভাস। যা তুলি দিয়ে সৃষ্টি করা যায় না। যা সৃষ্টি একমাত্র ঈশ্বরের মানসচক্ষু দিয়ে , প্রকৃতির ক্যানভাসে। কথায় আছে বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান। এই গঙ্গাসাগর মেলা সেই অর্থে সারা ভারতের ঐক্যের একটি প্রতিচ্ছ্ববি।
কিভাবে যাবেন গঙ্গাসাগরঃ
আগে শুধুমাত্র এই মুড়িগঙ্গায় নৌকাই ছিল একমাত্র পথ। এখন ভেসেল চলে হারউড পয়েন্ট হয়ে। আপনি সকালে গিয়ে , বিকেলেই কলকাতায় ফিরতে পারেন। যদি গাড়ি নিয়ে যান। এবছর নামখানা – চেমাগুড়ির রাস্তাকে আবার চালু করার ভাবনা চিন্তা চলছে।
এবার দেখে নেওয়া যাক ,খুব সহজেই আপনি কিভাবে যেতে পারবেন গঙ্গা সাগর মেলায়। গঙ্গাসাগরের নিকটতম বড় শহর কলকাতা। আর রেলস্টেশন কাকদ্বীপ ও নামখানা। কলকাতা থেকে বাসে ঘণ্টা তিনেকের যাত্রায় পৌঁছনো যায় হারউড পয়েন্ট ৮ নম্বর লঞ্চ ঘাটে। শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে কাকদ্বীপ বা নামখানা পৌঁছেও বাসে বা রিকশায় হারউড পয়েন্ট ৮ নম্বর লঞ্চ ঘাটে পৌঁছনো যায়। সেখান থেকে ফেরি ভেসেলে গঙ্গা পেরিয়ে কচুবেড়িয়া। কচুবেড়িয়া থেকে বাসে বা ট্রেকারে ৩০ কিমি দূরে সাগর।যারা হাওড়া হয়ে আসবেন। মেলার সময়ে হাওড়া রেস্টেশন থেকেও লট ৮ পর্যন্ত বাসের বন্দোবস্ত থাকে। তবে অন্য সময়ে যদি আস্তে চান। তাহলে হাওড়ায় ট্রেন থেকে নেমে, ধর্মতলায় এসে কাকদ্বীপ বা নামখানার বাসে নতুন রাস্তার মোড়ে নেমে ভচ্যান রিক্সা,অথবা অটো, বা বাসেও চলেযাওয়া যাবে লট-৮। মেলার সময় যাতায়াতের আরও বিশেষ ব্যবস্থা থাকে। গঙ্গাসাগরে থাকার জন্য নানান ধরমশালা ও পান্থনিবাস আছে। এ ছাড়া পি ডব্লু ডি, সেচ দফতরের ও পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বাংলো ও পঞ্চায়েতের যাত্রীনিবাস আছে।এখন আধুনিক আলোক সজ্জ্বায় আলোকিত সাগরতট। আগে শুধু মাত্র রাত্রে জেনারেটরে আলো জ্বলতো। এখন দ্বীপে সরাসরি বিদ্যুৎ চলে গেছে। ফলে বিদ্যুৎ সারাদিন। আর আছে খাবারের সব রকম ব্যবস্থা। এখানে বহু মিশনের আশ্রম আছে । গঙ্গাসাগর মেলার কম করে দু তিন মাস আগে থেকে ঘর বুক করতে হয় এখানে।
তাই সবশেষে বলি , পুরোন সেই দিনের কথা ভুলে যান। এখন আর গঙ্গাসাগর একবার নয় , বার বার। মানুষের উইক এন্ড পর্যটন মানচিত্রে একটা প্রধান জায়গা করে নিয়েছে সাগরদ্বীপ। আর এই সময়ে নলেন গুড় আর পাটালির অমোঘ টান উপরি পাওনা।
শেষে একটা জরুরী কথা । সাগরে যদি যেতে চান , তাহলে করোনার ভ্যাকসিনের দুটো ডোজ নেওয়া থাকতেই হবে , করতে হবে করোনা পরীক্ষা। করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ এলে তবেই ছাড়পত্র মিলবে সাগরে যাওয়ার। আর পরতেই হবে মাস্ক, সঙ্গে রাখতে হবে স্যানিটাইজার।
ছবি সৌজন্যঃ সংগৃহীত
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন