মাটির প্রদীপের কারিগরদের ঘরে এবার দীপাবলীতে জ্বলবে আলো মিটমিট করে

 

কালীপুজোয় রাজ্যে  মাটির প্রদীপের কদর কমেছে, হতাশার মাঝে তবুও আশাবাদী মৃৎশিল্পীরা



জয়দীপ মৈত্র ও কুশল দাশগুপ্ত,দক্ষিণ দিনাজপুর ও শিলিগুড়ি  , ২৭ অক্টোবরঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকদিন  দিন আর তারপরই সারা দেশ সহ আপামর বাঙালী আলোর রোশনাইয়ে ঝলমলিয়ে উঠবে। কারণ ৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ঘোর অমাবস্যায় অন্ধকারকে দুরে সরিয়ে আলোক জ্বেলে ঝকঝকে করতে মা কালী মর্তে আবির্ভূতা হবেন। কিন্তু যাঁদের মাটির প্রদীপে ঝলমল করে বা করেছে উৎসবের আঙিনা, সেই মৃৎশিল্পীদের ঘরেই এখন অন্ধকার। কারণ, বাজারে চিনা বাল্ব ও নানান বাহারি আলোর টুনি বাল্বের জেরে কালীপুজোয় মাটির প্রদীপের কদর কমে গেছে। সেই কারণে রীতি ও  সৌজন্যতা রাখতে বৈদ্যুতিক মোমবাতি, টুনি লাইট প্রভৃতি এসেছে বাজারে।

আগে কালীপুজো এলেই ঘর আলো করতে মাটির প্রদীপের চাহিদাই থাকত বেশি। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে গৃহস্থরা ঝুঁকেছেন তুলনায় সস্তা এবং বাহারি বৈদ্যুতিক আলোর দিকে। এই পরিস্থিতিতে কালীপুজোর মুখে দুঃশ্চিন্তার মুখে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুমোররা। মাটির প্রদীপের কদর কমতে থাকায় এই কাজ ছেড়ে অনেকেই এখন অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছেন।

আলোর উৎসব তথা দীপাবলীতে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে মাটির প্রদীপের আলো। তবে প্রদীপের চাহিদা কমলেও হাল ছাড়েননি জেলার অনেক মৃৎশিল্পীরা। সারা রাজ্য জুড়েই মৃৎশিল্পীরা পুজোর নানা উপকরণের সঙ্গে মাটির তৈরি প্রদীপ তৈরি করে আসছেন বংশ পরম্পরায়।কিন্তু বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক বৈদ্যুতিক বাতি বাজারে চলে আসায় প্রাচীন সেই মাটির প্রদীপ হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু বাজারে সেই প্রদীপের কম চাহিদা থাকায় প্রায় বন্ধের মুখে এই শিল্প।

জেলার বিভিন্ন গ্রামের বহু কুমোর পরিবার আগে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিল এখন সেটা কমে দাঁড়িয়েছে। মৃৎশিল্পীরা দীপাবলিকে সামনে রেখে ব্যস্ত নানা ধরনের প্রদীপ তৈরি করতে। তবে বেশ কিছু মৃৎশিল্পীর গলায় আক্ষেপের সুর। তাঁরা বলেন, আজকালকার ডিজিটাল যুগে যে হারে চায়না লাইট, টুনি বাল্ব ও নানা ধরনে এলইডি লাইট এসেছে সেই তুলনায় হাতে গড়া মাটির প্রদীপের বিক্রয় কমেছে, কমেছে তার কদর।

লাভ কম হলেও কুমোরদের আশা এই বছর তাঁরা লাভের মুখ দেখবেন। তাঁরা আরও বলেন, বর্তমানে মাটি ও খড়ির দামও বেড়েছে। কিন্তু প্রদীপের দাম বাড়ছে না। যাতে কোনও রকম খাওয়া খরচটা ওঠে। যদিও এখনো আগামী দিনে মাটির প্রদীপের চাহিদা বাড়বে বলে আশাবাদী জেলার মৃৎশিল্পীরা। 



অন্যদিকে শিলিগুড়ির চিত্রটা একটু অন্যরকম । সামনেই আলোর উৎসব আর  ঘরে ঘরে জ্জ্বলে ওঠে মাটির প্রদীপ। ঐতিহ্যবাহী মাটির প্রদীপ আমাদের ঘরে যারা পৌঁছে দেন সেই কুমোরপাড়ার ৫০০ মৃৎশিল্পরা সঠিক দাম না পেয়ে আজ তাঁদের বর্তমানে অবস্থা খুব শোচনীয়। দিওয়ালী মানেই প্রতিটি ঘরে আলো দিয়ে সাজিয়ে তোলার দিন। এই আলোর জন্য যে প্রদীপতার পেছনে যাদের হাত এই মৃৎশিল্পীরা আজ তাদের কাজের সঠিক মূল‍্য পাচ্ছেননা।

 মদন পাল ও রাম নিমাই পাল নামের দুই মৃৎশিল্পী জানান, করোনা তাদের জীবণ পাল্টে দিয়েছে। এর মাঝেই তারা সোজা হয়ে দাড়াবার চেষ্টা করছেন। তারা আরোও বলেন, গত বছরের তুলনায় এবছর তাদের ব‍্যবসা একটু ভালো তবে সঠিক দাম না পাওয়ায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পরেছে। তাদের হাতের তৈরী মাটির প্রদীপ মহারাষ্ট্র, দিল্লি, বোম্বাই পারি দেয়। প্রদীপের দাম যদি প্রতি হাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ হত তবে চলে যেত কিন্তু তাঁরা পায় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। তাই তারা এখন শুধুই দিন গুনছেন এবং আশা রাখছেন সব ঠিক হয়ে যাবে আর দীপাবলিতে সঠিক দামে প্রদীপ বিক্রি করতে পারবেন। এই রকম বহু বিক্রেতা আছেন যারা সারা বছর ধরে এইকটা দিনের অপেক্ষায় বসে থাকেন,গত বছর থেকেই করোনা আবহে একেবারেই কমে গেছে প্রদীপ বিক্রি,যার কারনে মাথায় হাত পড়ে গেছে প্রদীপ বিক্রেতাদের,এবারে তারা আশা করেছিলেন বাড়বে প্রদীপ বিক্রি কিন্তুু এবারও ব্যাবসায়ে মন্দা হবার কারনে তারা ভেবেই পাচ্ছেন না কি হবে তাদের জীবিকার,কি করে চলবে তাদের সংসার।যাও বা প্রদীপ বিক্রি হচ্ছে তাদের নির্দিষ্ট দামই উঠছে না।অন্যান্য জায়গার মত শিলিগুড়িতেও ছেয়ে গেছে নানান ধরনের লাইট তাই প্রদীপের ব্যাবহার কমেছে এমনিতেই।প্রদীপ কিনছেন না তা কিন্তুু নয় মানুষ তাদের ব্যাবহারিক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন আর যার ফলে মার খাচ্ছি আমরা জানালেন এক বিক্রেতা।আবার অনেকে আশায় আছেন পূজোর আগে ঠিক বিক্রি হবে প্রদীপ ফিরবে তাদের ভাগ্য মায়ের আর্শীবাদে।

মন্তব্যসমূহ