বিমল গুরুং গড়ে ফাটল , স্রোতের ধারা অনিতের দিকে

 পাহাড়ের রাজনীতিতে কি অনিত থাপা যুগ আসতে চলেছে ? নাকি রাজ্যের শাসক দলের পাল্লা ভারী হচ্ছে ? 



বিশেষ প্রতিনিধি , দার্জিলিং, ২০ সেপ্টেম্বরঃ এবার ভাঙন খোদ বিমল গুরুং-এর দুর্গে। বিমল গুরুংয়ের গড় বলে পরিচিত দার্জিলিংয়ের টাকভর এলাকায় ভাঙন মোর্চার বিমল গুরুং শিবিরে। এলাকার ৫০ টি পরিবার অনিত থাপার হাত ধরে যোগ দিল ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চায়। অন্যদিকে, সুখিয়াপোখরিতে ৭৫০ টি পরিবার পাহাড়ের বিভিন্ন দল ছেড়ে, শান্তা ছেত্রীর উপস্থিতিতে তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে দেন। মিরিক পৌরসভার চেয়ার পার্সন এল বি রাই-এর হাত ধরে এদিন তৃণমূলে যোগ দেন ৫০০ জিএনএলএফ সমর্থক।

রবিবার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সিংমারি-টাকভর সমষ্টি কমিটির ব্যবস্থাপনায় ওই এলাকায় একটি সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সভাপতি অনিত থাপা। এদিন এই সভায় এলাকার ৫০ টি পরিবার যোগ দেন অনিত শিবিরে। এই ৫০ টি পরিবারের মধ্যে সোম থেকে ৫ টি, জামুনি থেকে ১১ টি, লেপচাবস্তি থেকে ৩ টি, টাকভর থেকে ১ টি এবং সিনড্রেলা থেকে ৩০ টি পরিবার অনিত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চায় যোগ দেয়।



পাহাড়ের আন্দোলনের বিভিন্ন সময় টাকভর সংলগ্ন এই সমস্ত এলাকাকেই দুর্গ বানিয়ে অপারেশন চালিয়েছিলেন বিমল গুরুং-এর লোকজন। বিমল গুরুং-এর বাড়িও এই টাকভারেই। এই টাকভার থেকেই সেই সময়ের দোর্দন্ডপ্রতাপ সুবাস ঘিসিং-এর মনোনীত জিএনএলএফ প্রার্থীকে হারিয়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবে জয়লাভা করেছিলেন বিমল গুরুং।  বছর চারেক আগে বিমল গুরুং-এর অন্তর্ধানের সময়, টাকভার সংলগ্ন জামুনি এলাকা থেকেই তার বিশ্বস্ত লোকজনের সহায়তায় পুলিশের স্পেশাল অপারেশন টিমের হাত থেকে পালিয়ে যান বিমল গুরুং। মৃত্যু হয় বহু চর্চিত পুলিশ আধিকারিক অমিতাভ মালিকের। সেই এলাকায় এবার অনিত থাপার সংগঠন দানা বাঁধায়, তা পাহাড়ের রাজনীতিতে যথেষ্টই গুরুত্ব বহন করছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল।

অন্যদিকে, রবিবার সুখিয়াপোখরিতে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে পাহাড়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রীয় দল ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেয় ৭৫০ টি পরিবার। রাজ্যসভার সাংসদ তথা দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলা তৃণমূল সভানেত্রী শান্তা ছেত্রীর উপস্থিতিতে জোড়বাংলা এবং সুখিয়াপোখরির বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত এই ৭৫০ টি পরিবারের সদস্যরা তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নেন। গুরুত্বপূর্ণভাবে এদিন শেরপা বোর্ডের চেয়ারপার্সন নিমা ওয়াংদি শেরপাও শান্তা ছেত্রীর হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নেন। 

দার্জিলিং পাহাড়ের ক্ষেত্রীয় দলগুলির মধ্যে অন্তর্কলহের কারণে তাঁদের উপর ভরসা রাখতে না পেরেই পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করছেন বলে দাবী করেছেন শান্তা ছেত্রী। তাহলে কি নির্বাচনের সময় তৃণমূলের সঙ্গে জোটে থাকা বিমল গুরং, বিনয় তামাং এবং অনিত থাপাদের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে চলেছে তৃণমূল। সেই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন পাহাড়ের পোড়খাওয়া নেত্রী শান্তা ছেত্রী। তার সাফ কথা, তাঁরা তাঁদের দল তৃণমূলের হয়ে কাজ করছেন। এর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার কোন সম্পর্ক নেই বলেই দাবী করেছেন দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলা তৃণমূল সভানেত্রী শান্তা ছেত্রী।

অপরদিকে, মিরিক পৌরসভার চেয়ারপার্সন লাল বাহাদুর রাই-এর উপস্থিতিতে এদিন ৫০০-এর বেশী জিএনএলএফ সমর্থক তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় পতাকা হাতে তুলে নেন। মিরিকের সৌরেনি সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এই ৫০০ জন জিএনএলএফ সমর্থক তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এল বি রাই। শান্তা ছেত্রীর সুরেই এদিন এল বি রাই বলেন, পাহাড়ের ক্ষেত্রীয় দলগুলির মধ্যে অন্তর্কলহের কারনের পাশপাশি জিএনএলএফ-এর সমর্থন তলানিতে এসে ঠেকাতেই এত বিশাল সংখ্যক মানুষ জিএনএলএফ ছেরে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেছেন।

মন্তব্যসমূহ