বেহালার দিন প্রতিদিনে বর্ষণ সিক্ত রোমান্সের বিশেষ কলম কাজল ভট্টাচার্যের - বাদল রোমান্স

 বাদল বিশেষ 

বাদল রোমান্স 



- কাজল ভট্টাচার্য

 'আমার মেঘলা আকাশ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম।'
কেন আরকিছু পেলে না দেওয়ার মতো? ঝকঝকে আকাশটা রাখলে নিজের জন্য। রাণুর প্রথম ভাগ। ঝলমলে ঘননীল চাদরে মোড়া আকাশ। এক আকাশ সোনা রোদ্দুর। বর্ষাশেষের মেঘের ওড়াউড়ি। সব তোমার জন্য।
আর আমায় দিলে, মেঘলা আকাশ বৃষ্টি। তানসেনের সুরে রোদ ঝলমলে আকাশ গড়িয়েও, ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামতো শুনেছি। তোমার সুরে মেঘলা আকাশ ভেঙেও বৃষ্টি নামে না। আসলে বৃষ্টির গান শুনিয়ে তুমি আমাকে ভেজাতে চাও। সেই 'রূপ তেরা মস্তানা'র মতো। ওফ, সে কী রগরগে রোমান্স রাজেশ শর্মিলার। মেঘবৃষ্টির আড়ালে সেই রোমান্স চায় তোমার শরীর। মেঘলা আকাশের নীচে দেখতে চাও, এক প্রায় নগ্ন বর্ষণসিক্ত শরীর।

রাতভর উদ্দাম যৌনতা বৃষ্টির। ভোরের আলো ফুটতেই কেটে পড়া। সেই যৌনতায় ভেজা সিক্ত পৃথিবী। বৃষ্টির তোড়ে ক্ষত বিক্ষত শরীর। 
'কন্টকে কঙ্কণ ক্ষত ভাবো রে মিছাই।' সেদিন রাত অভিসারের পর রাধার কাছে ধরা পড়ে গিয়েছিলেন কালাচাঁদ। ললিতার কুঞ্জ থেকে বেরোলেন শ্রীকৃষ্ণ। 
- একি শ্যাম তুমি কার কাছে সিঁদুর সোহাগ পেলে? কানুর মুখে কপালে লেপটে থাকা সিঁদুর দেখে জানতে চাইলেন শ্রীরাধা।
- 'এ নহে সিঁদুর দাগ, এ তোমারই অনুরাগ।' উল্টো চাল দিলেন কানাই। ললিতার সোহাগচিহ্ন কানুর সারা শরীর জুড়ে। সেরকমই বৃষ্টির অভিসারের কথা ধরে রাখে পৃথিবীর নরম তুলতুলে বুক। শরীরের খাঁজখোঁজে জমে জল। পঙ্কিল পিচ্ছিল মাটি, পৃথিবীর শিথিল শরীর। রাতের অন্ধকারে উল্লাস নিশিযাপনের সাক্ষী। নোংরা খানাখন্দের ক্ষতময় উপহারে পৃথিবীকে সাজিয়ে দেয় বৃষ্টি।
এক আকাশ বৃষ্টি আর কে দিতে পারে? একমাত্র তুমিই দিতে পারো। তোমার দিকেই তো সারাবেলা চেয়ে থাকা। হ্যাংলাকে কিছু একটা দিলেই হলো। 

চুপটি করে থেকে এক আকাশ এক বাতাস গুমোট দিতে পারো। আবার দুরন্ত ঝড়ে উড়িয়ে দিতে পারো আমার যতসব বসন ব্যাসন। দুচোখ ভরে লালসার নজরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকিয়ে থাকতে পারো সেই উদোম শরীরের দিকে। আদিম যৌনতার চিটচিটে জল গড়িয়ে পড়বে তোমার দু'চোখের কোল থেকে। ইচ্ছে হলেই ঝাঁপিয়ে পড়তে পারো আমার উদোম শরীরের ওপর। তছনছ করে দিতে পারো আমার ষৌবনের সঞ্চয়। যখন যেভাবে খুশি। 

জবুথবু শীতের রাতে তোমার চঞ্চল হাত ঘুরে বেড়ায় আমার শরীরের আনাচে কোনাচে। কী খুঁজে বেরায় জানি না। উষ্ণতা উজার করার নামে, শরীরে চড়াও হতে পারো। ওই ঝমঝম করে বৃষ্টি নামার মতো।
ধারালো ফলার মতো বৃষ্টিধারা নিরন্তর ছোবল বসায় আমার সারা শরীর জুড়ে। ঠোঁটে দাঁত চেপে লুকানোর চেষ্টা তোমার কঠিন নিষ্পেষণের যন্ত্রণা। এই নিষ্পেষণ শুধু শরীরের না, মনেরও। তাই যন্ত্রণাটাও বড়ো গভীরের। অদৃশ্য, অসহ্যও। ভীষণ সন্দেহ হয় উষ্ণতা উজার করে দেওয়ার ছলে, উষ্ণতা চুরি করে নিয়ে যেতে আসো নাতো?


ছাড়িয়ে নিতে চাই তোমার পাইথন আলিঙ্গন থেকে। শব্দহীন আমি। মুখ চেপে ধরে অতল, এক পাতাল অভিমান। এক সিন্ধু লজ্জা। চারদিকে গুমোট। সেই এক আকাশ এক বাতাস গুমোট কাটাতে তুলতে পারো দুরন্ত ঝড়। সেই দুরন্ত ঘূর্ণিতে উড়িয়ে দিতে পারো আমার সেই অতলান্ত যন্ত্রণা, শরম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা, যতক্ষণ চোখের ক্ষুধা না মেটে, অপলক তাকিয়ে থাকতে পারো আমার অনাবৃত শরীরের দিকে। তোমারই সিঞ্চিত সোহাগ রসে, আজ শিথিল আমার সেই যৌবন সম্ভার।

দিতে পারো এক আকাশ খটখটে রোদ। জ্বলিয়ে পুড়িয়ে মারতে পারো সেই রোদে। আবার সেই জ্বালা মেটানোর অজুহাতে মেঘলা আকাশের রূপ ধরে মন ভোলাতে পারো। বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়তে পারো আমার ওপর। আঁসটানি গন্ধওয়ালা সেই সোহাগের বৃষ্টিতে জবজবে ভিজিয়ে দিতে পারো। ভিজিয়ে তৃপ্ত হলেই কেটে যেতে পারো। তুমি সব পারো। তুমি যে শাওন। তোমার আমি বৃষ্টি। আমি তখন বৃষ্টিভেজা খানখান, গড়াগড়ি খেতে পারি জলকাদায়।

এভাবেই চিরকাল প্রেমকে মেপেছো বাদল বিলাসের কায়দায়। যখনই তোমার শরীর ভারী হয়েছে, ঝরে পড়েছো বারবার। কখনও সারাবেলা অলস ভঙ্গিতে। আবার কখনও হার্মাদ জলদস্যুর মতো শেষরাতের হানায়। খেয়ালখুশিতে। শুষে নিয়েছো আমার আবেগের শেষ বিন্দুকেও। বারেবারে ঠকিয়েছ সেই তোমার তুমিকে। এক আকাশ বৃষ্টি দেওয়ার গান গেয়ে ফের সেই শরীরটাকেই ভেজাতে চেয়েছো। আসলে তো আমার শরীরটাকেই ভেজাতে চেয়েছো। মন ভেজানোর চেষ্টা করোনি। এভাবে আঁতলামি করলে হয় চিরসখা হে বন্ধু আমার?

তোমরা আসো আঙুলের ফাঁকে তুলি গুঁজে চিত্রী হয়ে। কখনও কবি হয়ে। আবার কখনও ধর্মরাজের ছদ্মবেশে। কখনও রংয়ের ঢেউ তুলে, কলমের ডগায় ছন্দ তুলে, আবার কখনও ঘোড়ার পিঠে সওয়ার তুমি বাজিমাত করতে চাও, বোড়ের চাল চেলে। ভুলে যাও, চাল চালতে চালতে একসময় ধর্মরাজও নিঃস্ব হয়েছিলেন।


বৃষ্টিভেজা আমিও এক দ্রৌপদী। বসন ছাপিয়ে আবারও প্রতিভাত হবে দ্রৌপদীর নগ্ন শরীর? আবারও নগ্ন হতে হবে দ্রৌপদীকে। তবে সেদিন একেবারে শেষ মুহূর্তে, দ্রৌপদীর লজ্জা নিবারণ করতে ছুটে এসেছিলো কৃষ্ণসখা। আজ সেই কৃষ্ণসখা কোথায় কে জানে? হারিয়ে ফেলেছি তাকে। 

কৌরবের রাজসভায় সেদিন তোমরা দেখতে চেয়েছিলে নগ্ন, রজঃস্বলা পাঞ্চালিকে। কিন্তু সেদিন আসলে নগ্ন হয়েছিলেন ধর্মরাজ। পঞ্চপাণ্ডব। 
এবার তুমিও উদোম হতে পারো। তার আগে এক মেঘলা আকাশ বৃষ্টি দিয়ে ভেজাবে আমাকে। আর কীই বা করতে পারো তুমি? কী দিতে পারো আমাকে? ওই মেঘলা আকাশের রোমান্টিসিজম ছাড়া, তোমার আছেটা  কী ?

চিত্র কৃতজ্ঞতাঃ সংগৃহীত

মন্তব্যসমূহ