আফগানিস্তান আপডেট
অগাস্ট ৩১ এর পরে কী
- কাজল ভট্টাচার্য
কুমারের হাড়িকুড়ি কামারের এক ঘা।
আর সেই মোক্ষম ঘায়ের ভয়েই পিঠ বাঁচাতে ব্যস্ত বিশ্বের কুলীন শক্তিধর রাষ্ট্ররা।
রাতারাতি বদলে গেলো পৃথিবীটা।
বদলে গেলো বিশ্বশক্তির সমীকরণটাও।
আমেরিকা আর সোভিয়েত রাশিয়া, আদি বিশ্বশক্তির দুই মেরু। এরপর সোভিয়েত রাশিয়া ছত্রভঙ্গ হওয়ার পর, আমেরিকার একাধিপত্য দেখলো দুনিয়া। ওদিকে এক অন্য রণকৌশল মাফিক বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির সারিতে উঠে আসতে চাইলো চীন। ঠিক এমন সময়েই ক্ষমতার পট পরিবর্তন।
আপাতত সব শক্তিধররা নতজানু তালিবানের সামনে। সাত শক্তিধর রাষ্ট্রের জি-৭ জোটের ভার্চুয়াল বৈঠক হয়ে গেলো আফগানিস্তানের তালিবান রাজ নিয়ে। শোনা গেলো কিছু গুজগুজ, ফিসফাস। কিছু মান অভিমানের কথা। কিন্তু গলা উঁচিয়ে কথা বলার স্পর্ধা দেখালো না কেউ।
মান অভিমান আফগানিস্তান থেকে বিদেশি নাগরিকদের সরানো নিয়ে। বন্ধু রাষ্ট্রগুলো আবদার করেছিলো বিগ ব্রাদার জো বাইডেনের কাছে। অন্তত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেডলাইন বাড়ানোর জন্য চাপ দেওয়া হোক। কিন্তু অনড় মার্কিন প্রেসিডেন্ট। অনড় তালিবান। ডেডলাইন ৩১ অগাস্ট পর্যন্তই।
আফগানিস্তানে আর একজনও ন্যাটো সেনা বা বিদেশী নাগরিক না। ৩১অগাস্টই ডেডলাইন। আর একদিনও ওই সময়সীমা বাড়ানো হবে না, হুমকি তালিবানের। জি-৭ এর শক্তিধর জোটকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনতে রাজি না মুল্লা আবদুল বরাদারের জঙ্গি জোট। এটাই তাদের স্বভাবজাত জঙ্গিপনা। আপোস আলোচনা সমঝোতার রাস্তা এদের জানা নেই বলেই এরা তালিবান। এদের কথাই শেষকথা। সোনামুখ করে কথা শোনো, নইলে বেতের ঘা। বেয়াড়াগিরি করলে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাবে সাধের শরীর। কোনও সওয়াল জবাব না। গুলিগোলা বারুদ বন্দুকের দাওয়াই।
অঙ্কের হিসেবে, হাতে আর মাত্র পাঁচদিন। তারমধ্যেই বিদেশিদের ছাড়তে হবে আফগানিস্তানের মাটি। নইলে ভয়ঙ্কর পরিণতির জন্য তৈরি থাকতে বলেছে তালিবান শাসকরা। শুধু বিদেশি নাগরিকরাই না, দেশ ছাড়ার ধুম পড়ে গেছে আফগানদের মধ্যেও। বেঁকে বসেছে জঙ্গিরা। আর কোনও আফগান নাগরিক দেশ ছেড়ে পালাতে পারবেন না।
এতেও হুঁস ফেরেনি আমেরিকা ব্রিটেন রাশিয়ার। এই তালিবানিরা কতটা 'গুড' তা দেখার জন্য অপেক্ষায় আছে তারা। আর সেকথা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়াও হয়েছে। সেসব দেখেশুনে নেওয়ার জন্য কিছুদিন অপেক্ষায় থাকবেন শক্তিধররা। আফগান নাগরিকরাও যখন দেশের তালিবান শাসকদের ভয়ে জান কবুল করে পালাতে ব্যস্ত, তখনও তালিবানের ওপর ভয়ঙ্কররকমের আশাবাদী শক্তিধর রাষ্ট্র নায়করা। একেই বলে, মায়ের চেয়ে বেশি মাসির দরদ।
তালিবানের ব্যাপারটা নাহয় বোঝা গেলো। মার্কিন সেনা সমেত বিদেশি নাগরিকদের দেশছাড়া করে তারা চাইছে নিশ্চিন্ত হতে। এরপরেই শরিয়তের আইন প্রতিষ্ঠা করে তারা রাজপাট চালাবে। ইতিমধ্যেই তার কিছু নমুনার কথাও শোনা গেছে সংবাদমাধ্যমের সৌজন্যে। জিনসের প্যান্ট পরায় যুবককে বেধড়ক ঠ্যাঙানি। নেলপলিশের খেসারত দিতে মহিলার আঙুল কেটে নেওয়া। গানবাজনা নিষিদ্ধ।
কিন্তু বাইডেনের তাড়াহুড়োটা কেন?
৩১ অগাস্টের ডেডলাইন নিয়ে তালিবানের মতোই একগুঁয়ে বাইডেনেও। এর নেপথ্যেও এক গল্প আছে।
গতবছর ফেব্রুয়ারিতে তালিবানের সঙ্গে এক চুক্তি করেছিলেন আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলা হয়েছিল চলতি বছরের মে ১ তারিখের মধ্যেই সেনা প্রত্যাহার করবে আমেরিকা। ক্ষমতায় আসার পর গত এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখে বাইডেন জানান, মে ১ না, সেপ্টেম্বর ১১ তারিখের মধ্যে সেনা সরিয়ে নেওয়া হবে।
রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠ মহল বাইডেনকে জানায় ব্যাপারটা চোখে ঠেকবে। কারণ সেপ্টেম্বর ১১ তারিখেই বিশবছর পূর্ণ হবে আমেরিকার ওয়ার্লড ট্রেড সেন্টার ধ্বংসের। তাই সেনা প্রত্যাহারের দিন বদলানো হোক। ওই কথা মনে ধরে প্রেসিডেন্টের। এরপর জুলাই মাসে তিনি জানান, সেনা প্রত্যাহার করা হবে অগাস্ট ৩১ তারিখের মধ্যেই।
আর সেই মোক্ষম ঘায়ের ভয়েই পিঠ বাঁচাতে ব্যস্ত বিশ্বের কুলীন শক্তিধর রাষ্ট্ররা।
রাতারাতি বদলে গেলো পৃথিবীটা।
বদলে গেলো বিশ্বশক্তির সমীকরণটাও।
আমেরিকা আর সোভিয়েত রাশিয়া, আদি বিশ্বশক্তির দুই মেরু। এরপর সোভিয়েত রাশিয়া ছত্রভঙ্গ হওয়ার পর, আমেরিকার একাধিপত্য দেখলো দুনিয়া। ওদিকে এক অন্য রণকৌশল মাফিক বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির সারিতে উঠে আসতে চাইলো চীন। ঠিক এমন সময়েই ক্ষমতার পট পরিবর্তন।
আপাতত সব শক্তিধররা নতজানু তালিবানের সামনে। সাত শক্তিধর রাষ্ট্রের জি-৭ জোটের ভার্চুয়াল বৈঠক হয়ে গেলো আফগানিস্তানের তালিবান রাজ নিয়ে। শোনা গেলো কিছু গুজগুজ, ফিসফাস। কিছু মান অভিমানের কথা। কিন্তু গলা উঁচিয়ে কথা বলার স্পর্ধা দেখালো না কেউ।
মান অভিমান আফগানিস্তান থেকে বিদেশি নাগরিকদের সরানো নিয়ে। বন্ধু রাষ্ট্রগুলো আবদার করেছিলো বিগ ব্রাদার জো বাইডেনের কাছে। অন্তত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেডলাইন বাড়ানোর জন্য চাপ দেওয়া হোক। কিন্তু অনড় মার্কিন প্রেসিডেন্ট। অনড় তালিবান। ডেডলাইন ৩১ অগাস্ট পর্যন্তই।
আফগানিস্তানে আর একজনও ন্যাটো সেনা বা বিদেশী নাগরিক না। ৩১অগাস্টই ডেডলাইন। আর একদিনও ওই সময়সীমা বাড়ানো হবে না, হুমকি তালিবানের। জি-৭ এর শক্তিধর জোটকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনতে রাজি না মুল্লা আবদুল বরাদারের জঙ্গি জোট। এটাই তাদের স্বভাবজাত জঙ্গিপনা। আপোস আলোচনা সমঝোতার রাস্তা এদের জানা নেই বলেই এরা তালিবান। এদের কথাই শেষকথা। সোনামুখ করে কথা শোনো, নইলে বেতের ঘা। বেয়াড়াগিরি করলে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাবে সাধের শরীর। কোনও সওয়াল জবাব না। গুলিগোলা বারুদ বন্দুকের দাওয়াই।
অঙ্কের হিসেবে, হাতে আর মাত্র পাঁচদিন। তারমধ্যেই বিদেশিদের ছাড়তে হবে আফগানিস্তানের মাটি। নইলে ভয়ঙ্কর পরিণতির জন্য তৈরি থাকতে বলেছে তালিবান শাসকরা। শুধু বিদেশি নাগরিকরাই না, দেশ ছাড়ার ধুম পড়ে গেছে আফগানদের মধ্যেও। বেঁকে বসেছে জঙ্গিরা। আর কোনও আফগান নাগরিক দেশ ছেড়ে পালাতে পারবেন না।
এতেও হুঁস ফেরেনি আমেরিকা ব্রিটেন রাশিয়ার। এই তালিবানিরা কতটা 'গুড' তা দেখার জন্য অপেক্ষায় আছে তারা। আর সেকথা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়াও হয়েছে। সেসব দেখেশুনে নেওয়ার জন্য কিছুদিন অপেক্ষায় থাকবেন শক্তিধররা। আফগান নাগরিকরাও যখন দেশের তালিবান শাসকদের ভয়ে জান কবুল করে পালাতে ব্যস্ত, তখনও তালিবানের ওপর ভয়ঙ্কররকমের আশাবাদী শক্তিধর রাষ্ট্র নায়করা। একেই বলে, মায়ের চেয়ে বেশি মাসির দরদ।
তালিবানের ব্যাপারটা নাহয় বোঝা গেলো। মার্কিন সেনা সমেত বিদেশি নাগরিকদের দেশছাড়া করে তারা চাইছে নিশ্চিন্ত হতে। এরপরেই শরিয়তের আইন প্রতিষ্ঠা করে তারা রাজপাট চালাবে। ইতিমধ্যেই তার কিছু নমুনার কথাও শোনা গেছে সংবাদমাধ্যমের সৌজন্যে। জিনসের প্যান্ট পরায় যুবককে বেধড়ক ঠ্যাঙানি। নেলপলিশের খেসারত দিতে মহিলার আঙুল কেটে নেওয়া। গানবাজনা নিষিদ্ধ।
কিন্তু বাইডেনের তাড়াহুড়োটা কেন?
৩১ অগাস্টের ডেডলাইন নিয়ে তালিবানের মতোই একগুঁয়ে বাইডেনেও। এর নেপথ্যেও এক গল্প আছে।
গতবছর ফেব্রুয়ারিতে তালিবানের সঙ্গে এক চুক্তি করেছিলেন আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলা হয়েছিল চলতি বছরের মে ১ তারিখের মধ্যেই সেনা প্রত্যাহার করবে আমেরিকা। ক্ষমতায় আসার পর গত এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখে বাইডেন জানান, মে ১ না, সেপ্টেম্বর ১১ তারিখের মধ্যে সেনা সরিয়ে নেওয়া হবে।
রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠ মহল বাইডেনকে জানায় ব্যাপারটা চোখে ঠেকবে। কারণ সেপ্টেম্বর ১১ তারিখেই বিশবছর পূর্ণ হবে আমেরিকার ওয়ার্লড ট্রেড সেন্টার ধ্বংসের। তাই সেনা প্রত্যাহারের দিন বদলানো হোক। ওই কথা মনে ধরে প্রেসিডেন্টের। এরপর জুলাই মাসে তিনি জানান, সেনা প্রত্যাহার করা হবে অগাস্ট ৩১ তারিখের মধ্যেই।
ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলো না ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইটালি, জার্মানির মতো জি-৭ জোটের দেশগুলো। তারা চেয়েছিল ডেডলাইন বাড়ুক পূর্বনির্দিষ্ট সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বন্ধুদের অনুরোধ উপরোধে গা করেননি বাইডেন। উল্টে তাঁর মত, যত তাড়াতাড়ি আফগানিস্তান থেকে পাততাড়ি গোটানো যায় ততই মঙ্গল।
কিন্তু পাততাড়ি গোটানোটাও যে ক্রমেই মুশকিল হচ্ছে। ব্রিটেন, আমেরিকার মতো অন্যান্য দেশগুলোর কপালে ভাঁজ। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, কাবুল, কন্দাহার বিমানবন্দরের উপচে পড়া ভিড়ের সুযোগ নিয়ে জঙ্গিরা হামলা চালাতে পড়ে। তাই যে যার নিজের দেশের নাগরিকদের পরামর্শ দিচ্ছে, বিমানবন্দর থেকে দূরে থাকতে। কিন্তু তাহলে ওই বিদেশীরা আফগানিস্তান থেকে বেরোবে কোন হাওয়াগাড়ি চেপে? বিমান তো ঘরের দরজায় এসে যাত্রী তুলবে না। তবু মন্দের ভালো, বিদেশী নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় তালিবানের মদত চেয়েছেন বাইডেন। তবে তিনি চাইলেই যে তালিবানরা মদত দেওয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে বসে আছে এমনটা নয়। বরং সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সব বিভৎস ছবি। টিভি'র পর্দায় বারবার ভেসে উঠেছে, তালিবান জঙ্গিদের হামলায় রক্তাক্ত অস্ট্রেলিয়ার এক যুবকের ছবি।
৩১ অগাস্টের ডেডলাইন মিস করলে কী হবে? আমেরিকা ব্রিটেন ছাড়া আরও অন্যান্য দেশের নাগরিকরা আছে সেখানে। ওদিকে ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে কাবুল বিমানবন্দর।
এরমধ্যেই শোনা যাচ্ছে আজ ইটালির বিমান কাবুল বিমানবন্দর থেকে ওড়ার পরেই তাকে গুলির নিশানা করা হয়। তবে কে গুলি করলো এখনও তা জানা যায়নি।
ওই খবরের রেশ কাটতে না কাটতেই বিস্ফোরণের খবর। কেঁপে উঠলো গোটা চত্বর। কাবুল বিমানবন্দরে ঢোকার মুখেই এক প্রবল বিস্ফোরণ হয়। এরপরেই শুরু হয়ে যায় গুলিবৃষ্টি। প্রাণভয়ে ছুটে পালাতে থাকে মানুষ। আমেরিকার পেন্টাগন বিস্ফোরণের খবরের সত্যতা স্বীকার করেছে বলে খবর।
এর আগে অগাস্ট ২২ তারিখে, রহস্য দানা বেঁধেছিলো ইউক্রেনের বিমান নিয়েও। সে দেশের নাগরিক আর সেনাদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতেই ওই বিমান কাবুল বিমানবন্দরে নেমেছিলো। এরপরেই শোনা যায়, বিমানটি অপহরণ করা হয়েছে।
কাবুল বিমানবন্দরের প্রবেশপথে গুলিগোলা চলেছিলো এক অজ্ঞাত পরিচয় বন্দুকবাজ আর নিরাপত্তা রক্ষীদের মধ্যে। প্রাণ গিয়েছিলো এক আফগান সৈনিকের। গুরুতর জখম হন আরও তিনজন। ঘটনায় জড়িয়ে ছিলো বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মার্কিন, জার্মান সেনারাও।
এই পরিস্থিতিতে অগাস্ট ৩১ এর ডেডলাইনের মধ্যে বিদেশী নাগরিক, সেনাদের আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে তো? যদি না হয়, তাহলে জি-৭ এর কোনও দেশ বিপদে পড়লে বিগ ব্রাদার কী করবেন? তা আগেভাগে ভেবে রাখাই ভালো।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন