অবশেষে রাজনীতির ময়দানে টুম্পা সোনা - বিশেষ কলম

 


।। টুম্পা সোনাও খেলতে নামবে ।।








রাজদর্শী রায়, কলকাতা, ফেব্রুয়ারি ২৪:

অনুব্রত মণ্ডলের টিম শ্লোগান তুলবে, 'খেলা হবে'। গোল আগলাবেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আলিমুদ্দিনের টুম্পা সোনা গোলে বল ঠেলতে পারবে তো?
ওদিকে তখন গা ঘামিয়ে তৈরি পদ্ম শিবির। জোর হুঙ্কার- জয় শ্রীরাম।

এতদিনে আমরা যা জেনেছি, টুম্পা সোনা হাম্পি খাওয়ার জন্যই ভাইরাল হয়েছিল। তাকে হঠাতই ভোটের ময়দানে খেলতে নামিয়ে দিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র। জোড়া ফুল শিবির গ্যালারিতে গলা ফাটাবে 'খেলা হবে'। লাল শিবির আওয়াজ তুলবে- খেল টুম্পা খেল। বিপদ হবে তখনই যদি দর্শক গ্যালারি থেকে আওয়াজ ওঠে- টুম্পা সোনা দুটো হাম্পি(গোল) দেনা।

মানুন আর না মানুন, শ্লোগান তৈরিতে অনুব্রত মণ্ডলই সেরা। তাঁকে নিয়ে অনেক উপহাস, কটাক্ষই করে থাকেন বিরোধীরা। নিজের দলেও তিনি কোনও মন্ত্রীযন্ত্রী না। তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি মাত্র। খানিকটা বাহুবলী টাইপড এক রাজনীতিবিদ। ধুরন্ধর রাজনীতিবিদদের মতো রেখেঢেকে সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলার ধার ধারেন না। তার কারণটাও মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, 'কেষ্টার(অনুব্রত মণ্ডল) মাথায় অক্সিজেন কম যায়।' তবে সে যাই হোক না কেন, তুখোড় মাথা অনুব্রতবাবুর। ভোটের মুখে তিনি যখনই মুখ খোলেন, তখনই তাঁর বচন সুপার ডুপার হিট।

বীরভূমে বসে অনুব্রত মণ্ডল কথাচ্ছলে বলেছিলেন 'খেলা হবে'। সেই খেলা হবেকে ক্যাচ লাইন করেই মাতিয়ে দিলেন তরুন দেবাংশু ভট্টাচার্য। সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে একদম জমজমাট এক কোরাস। এরপর কলকাতার তৃণমূল ভবনে দলের নামীদামীরা মাথা ঘামিয়ে ছকে ফেললেন দলের অফিসিয়াল শ্লোগান- বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়। সেই শ্লোগানও কিন্তু 'খেলা হবে'কে ছাপিয়ে যেতে পারলো না। এর আগেও নির্বাচনে অনুব্রতবাবু 'রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড়িয়ে' থাকার কথা বলেছিলেন। সেই কথাও পরবর্তীতে শ্লোগান হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ঝড় উঠেছিল বিতর্কের। এমনকি শঙ্খ ঘোষের মতো বাংলার প্রখ্যাত কবিও সেই শ্লোগানের প্রতিবাদে কলম ধরেছিলেন। কবির কলম ধরার ঘটনায় খেপে উঠেছিলেন অনুব্রতবাবু। তাঁর সেই বক্তব্য নিয়েও আর এক প্রস্থ বিতর্ক বাঁধে। তবে ঘটনা যাই হোক, অনুব্রত মণ্ডল এবারেও ফিরে এলেন তাঁর স্বমহিমায়। বুঝিয়ে দিলেন রসবোধে তিনিই সেরা।



বেশ এক লড়াকু অ্যাপ্রোচ আছে 'খেলা হবে' শ্লোগানে। সেই লড়াকু মেজাজকে টেক্কা দিতে ভোটবাজারে চটকদার টুম্পা সোনাকে হাজির করলেন বামফ্রন্ট কর্তারা। 'রেস্ট ইন প্রেম' ওয়েব সিরিজের গান টুম্পা। নিজের লেখা এই গানটি গেয়েছেনও আরব দে। সুর অভিষেক সাহার। পর্দায় গানটিতে লিপ দিয়েছেন সায়ন ঘোষ। রিলিজ হওয়ার পরেই ভাইরাল হয়ে যায় টুম্পা সোনা। টুম্পার এই জনপ্রিয়তা দেখেই লোভ সামলাতে পারেনি লালশিবির। গানের সুর অবিকৃত রেখে কথা কাটছাঁট করে নেওয়া হয়েছে। 'টুম্পা তোকে নিয়ে ব্রিগেড যাব।' এমনটাই স্বপ্ন সিপিএমের।

একুশের ভোটে ভোটাররা পথে নামার আগে থেকেই যত্রতত্র শুনতে পাবেন টুম্পার ডাক। কিন্তু টুম্পা সোনা ঠিক কজনের হাত ধরে ভোটবাক্সের সামনে হাজির করাতে পারবে, তা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ আছে। 'পথে এবার নামো সাথী' থেকে একেবারে সরাসরি 'টুম্পা সোনা' হজম করা বাঙালি পেটে সইলে হয়! গুরুপাক হলেই হিতে বিপরীত। অনেকেই মনে করেন সিপিএমের মতিভ্রম হয়েছে। এরকম এক চটুল গানের কথা বদলে দিলেই যে টুম্পা সোনার চরিত্র রাজনৈতিক হয়ে যায় না, সে সহজ সরল ব্যাপারটাও মাথায় ঢোকেনি লাল শিবিরের। দলের সমর্থকরা অবশ্য এক যুক্তি খাড়া করেছেন, নয়া প্রজন্মের ভোটারদের কাছে পৌঁছতেই 'টুম্পা সোনা'র শরণ নেওয়া। তবে সবমিলিয়ে আলিমুদ্দিনের কাছে ব্যাপারটা শেষ পর্যন্ত , 'শ্যাম রাখি না কুল রাখি' না হয়ে দাঁড়ায়।

অনুব্রতবাবুর সৃষ্টির মহিমা দেখুন, 'খেলা হবে' শুধু তৃণমূলের মুখেই শোনা গেলো না। বিরোধীদের মুখেও শোনা গেল সেই শ্লোগান। তবে অবশ্যই যে যাঁর মতো সাজিয়ে গুজিয়ে ইন্টারপ্রেট করলেন। বিজেপি জবাব দিলো, আমরাও খেলতে জানি। খেলা হবে। নির্বাচনটা খেলা নাকি, ঝাঁজ সিপিএমের। তবে বাস্তব এটাই, অনুব্রত মণ্ডলের শ্লোগানকে এবারেও উপেক্ষা করতে পারলেন না কোনও পক্ষই। আর সেই শ্লোগানকে কোরাসে পরিবেশন করায় 'খেলা হবে'র ধার বেড়ে গেছে শতগুন। বেশ একটা বহুমুখী ব্যাপার আছে ছোট্ট ওই শ্লোগানে। খোদ অনুব্রতবাবুও কখনও বলেছেন, 'ভয়ঙ্কর খেলা হবে'। আবার প্রশ্নের মুখে পড়লেই বলেছেন, 'গণতন্ত্রের খেলা'। বিরোধীরা অবশ্য ওই শ্লোগানে হুমকির ছায়া আবিষ্কার করেছেন। 

এখনও যে ছবিটা দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনী ময়দানে সরাসরি টক্কর ঘাসফুল আর পদ্মফুল শিবিরের। বিজেপি বারেবারে অভিযোগ করে, তাদের শ্লোগান 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি উঠলেই চটে যান তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে বাস্তবে 'জয় শ্রীরাম' শ্লোগানের ধার এতদিনে বেশকিছুটা কমে গেছে। এরপরেই শুভেন্দু অধিকারী শ্লোগান দিলেন, 'কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, বিজেপি ঘরে ঘরে'। চলনসই শ্লোগান। তবে তা সার্বিকভাবে দলের শ্লোগান হয়ে ওঠেনি। বরং দলের বিভিন্ন বক্তারা ব্যস্ত তৃণমূল কংগ্রেসের 'খেলা হবে'র ইন্টারপ্রেট করতে। ময়দানে নামার তৎপরতা বেড়েছে লাল দুর্গেও। কংগ্রেসের হাত ধরে টুম্পা সোনাতে ভর করে তাঁরাও খেলতে নামবেন।

এবার অপেক্ষা বাংলার নির্বাচনী ডার্বি ম্যাচের। খেলা হবে। দেখা যাক, 'টুম্পা সোনা' খেলতে নেমে শেষ পর্যন্ত কোন শিবিরের কপালে 'হাম্পি' খায়। যেভাবে দলবদলের হিড়িক চলেছে, তাতে 'টুম্পা সোনা' দলবদল করলেও চমকানোর মতো কোনও কারণ থাকবে না।



মন্তব্যসমূহ