ভুতের খোঁজে
ওরা নাকি ভুত খুঁজে বেড়ান ?
( ওরা নাকি ভুত ধরেন। এমনটাই
পরিচয় অদের গায়ে লেগে গেছে। দেবরাজ আর ইশিতা । এই দম্পতি চিরকালের অশরীরী
অস্তিত্বের ভ্রান্ত একটা অলীক ধারণাটাকে ভাঙতে বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে এগিয়ে
চলেছেন। কালীপূজোর দিন তাঁদের সঙ্গে স্বপন দাসের সাক্ষাতে এটাই জানা গেল। )
দাদাগিরির মঞ্চ। মঞ্চে একদিকে দাদা , সৌরভ গাঙ্গুলি, অন্য
দিকে এই রিয়্যালিটি শো’তে অংশ নেওয়া মানুষজন। পরিচয় সারা হচ্ছে। হঠাৎ একজনের কাছে
এসে দর্শকদের কৌতূহল বেড়ে গেল। মেয়েটির নাম ইশিতা দাস সান্যাল , বেহালার
বাসিন্দা। একসময়ে টেলিমিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ওতপ্রোত ভাবে। পরে , সেখান থেকে
একটু সরে গিয়ে, চিন্তা ভাবনাকে অন্য আর একটি বিষয়ে আটকে ফেলেছেন, অনেকটা স্বামীর
সুত্র ধরেই।
এই দেখুন আসল কথা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। বেহালার গ্রীন
ফিল্ড সিটির বাসিন্দা, ইশিতা এই
বিষয়টির প্রতি মানুষের আগ্রহ চিরকালের। একটু খোলসা করা যাক। হয়ত কিছু বাস্তববাদী
বলবেন, এই বিষয়টার কোন অস্তিত্ব নেই। আবার সিংহ ভাগ নানা উদাহরণ দিয়ে বলবেন , আছে।
এই দ্বন্দ্বের শেষ কবে হবে কেউ জানেনা। সেই অতিত থেকে আর আজকের দিনে, এই বিষয় ও
তার সঙ্গে যুক্ত অশরীরী মানুষগুলো যখনই সা,সামনে এসেছে নানা মিডিয়ামের হাত ধরে,
তখনই মানুষের জানার আগ্রহে চেটে পুঠে আস্বাদ নিয়েছে, বা আজো নেন।
সেদিন দাদাগিরির মঞ্চে অবাক করে দিয়ে ইশিতা বলেছিলেন , তাঁদের একটা টিম আছে,
যারা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে, এই অশরীরীদের অস্ত্বিত্ব খুজে বেড়ান। আর তারা , সেটার
টেরও পান। এক্ষেত্রে নানা আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য তারা নেন। আর সেই প্রযুক্তি ও
যন্ত্রপাতি নিয়ে, যে যে জায়গায় এই সব অশরীরীরা থাকেন বলে পরিচিত , সেখানে চলে যান।
নির্ভয়ে। এই টিমের শুভজ্যোতি রায় চৌধুরী ,
অনিন্দম ঘোষাল , শুভজিত সাহা , উজ্জ্বল গুপ্তরা খুজে বেড়ান সেই অস্তিত্ব , যেটা
মানুষের মনে রয়েছে বছর বছর ধরে।
সেদিন মনে প্রশ্ন জেগেই ছিল , অন্য সবার মত। সত্যি কি ভুত আছে , নাকি পুরোটাই কল্পনা।
আচ্ছা, আমরা সবাই তো এই অশরীরীদের অস্তিত্বকে স্বীকার করে
নিয়ে খুব ভয় পাই। সবাই হয়ত পাই না। কেউ কেউ পাই। যেমন সেদিন , মঞ্চে দাঁড়িয়ে,
সঞ্চালক ভারতীয় ক্রিকেট দলের অকুতোভয় ক্যাপ্টেন ,সৌরভ বলেছিলেন, তিনিও এই
অশরীরীদের একটু হলেও অন্য অনুভূতিতে দেখেন। সে যাই হোক। সেদিন থেকেই পাদ প্রদিপের
আলোয় চলে আসে ইশিতা আর তাঁর টিমের
কথা।কথা হচ্ছিল ইশিতা সঙ্গে।
দীপাবলীর রাতে এই সব অশরীরীরা একেবারে মাটির কাছে নেমে আসেন, তাঁদের এই অমাবস্যার
রাতে, একটু আলাদা ভাবে ঘুরে বেড়াবার বিষয়টাকে টের পান অনেকেই। তাঁদেরকে শ্রদ্ধা ও
ভক্তি জানিয়ে আমরা দ্বীপ জ্বালাই। এরকম কত কি না করি ?সেই তাঁদেরকে খুজে বেড়ান
ইপ্সিতা, তাঁর স্বামী দেবরাজ , আর সঙ্গে গোটা টীম। একটি সাধারণ মেয়ের মধ্যে এত
সাহস। কি বলছেন ইপ্সিতা।
ইশিতা এত সাহসী ? ,
“ না না ,অন্যদের মত আমিও খুব ভয় পেতাম ওদের। কিন্তু বিয়ের পর, যখন দেখলাম আমার
স্বামী , দেবরাজ , এই বিষয়টা নিয়ে খুব চিন্তা ভাবনা করে, আর একটু অন্য ভাবে। তখন
কৌতূহল বেড়ে গেল। আস্তে আস্তে মনের মধ্যে কার ভয়টাও কাটতে শুরু করে দিল। এখন আমিই
আগে যাই সবার থেকে। তবে কি জানেন ? আমাদের উদ্দেশ্য , মানুষের মনের মধ্যেকার
ধারণাটাকে একটু হলেও পালটে দেওয়া।“
কি সেই পালটে দেওয়া ? দেবরাজের কথায় , এই যে সবাই একটা অন্য
রকম কল্পনার জগত তৈরি করে ,এই অশরীরী অস্তিত্বকে নিয়ে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করে
রেখেছে। সেই জায়গা থেকে বাস্তবতার জগতে নিয়ে আসাটাই এই টিমের কাজ। ভুতের
অস্তিত্বকে প্রমাণ করে , সাধারণে মধ্যে থাকা ভুল ধারণাটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া
উদ্দেশ্য নয়। আমাদের অনেকেই ডাকেন, আমরা ৯৯ শতাংশ জায়গায় গিয়ে কিছুই পাইনি ।‘’
দেবরাজের মাথায় এই চিন্তা এসেছিল নিছকই কৌতূহল থেকে । তাঁর
মতে , না জেনে একটা বিষয়কে চিরকাল ,একটা
ভয়ের চাদরে মুড়ে রেখে, সাধারণের মনের
মধ্যেকার নানা কুসঙ্কারের বিরুদ্ধে এই প্রচেষ্টা অনেকটাই সাহায্য করবে ভুল
ধারনাটাকে দূর করতে । আর এই ভুত সম্পর্কে অজানা কৌতুহলকে মানুষের মন থেকে দূর
করতে।
খুব হালকা ভাবে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমাদের পরিচয়, তোমরা
নাকি ভুত ধরা টিম , এই পরিচয় খারাপ লাগে না ?
উত্তর আসে, “ খারাপ তো লাগে ? আমরা বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণ
করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যে আমাদের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট কিছু ওয়েভ আছে, সেখান
থেকে সেই ওয়েভে সংকেতের অস্তিত্বের টের পাওয়া যায়। এই সংকেত আসছে কোথা থেকে ?
সেটাই আমরা খুজে বেড়াই ? যখনই কোথাও শুনি , সেটি ভুতের বাড়ি, বা আস্তানা, আমরা
সেখানে ছুটে যাবার চেষ্টা করি। আর মজার ব্যাপার আমাদের কাছে ঐ সব জায়গায় ধরা পড়েছে
, একটা সংকেত। “
তাহলে কি মানতে হবে ভুত আছে ?” দেবরাজ বা ইশিতা এক সাথেই বলে ওঠেন , আমরা কখনই
সেটা বলব না বা বলছি না। তবে বলতে পারি একটা অন্য রকম কোন শক্তি আছে। এই প্রসঙ্গে
একটি ধারনার কথা বলা যাক। আমরা সবাই নর্থ ইস্টার্ন আটলান্টিক সাগরে থাকা বারমুডা
ট্রাঙ্গেলের কথা জানি। মানুষের ধারনায় এই জায়গার রহস্য চিরকালের। অনেকে আবার এটাকে
ডেভিল’স ট্রাঙ্গেল বলে থাকেন। কারণ এই জায়গায় গিয়ে হারিয়ে গেছে বহু জাহাজ ও বিমান।
আজো তাদের কোন খোঁজ মেলেনি। কেউ কোনদিন ভেবে দেখেননি বিমান বা জাহাজটি ঐ জায়গায়
কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছিল, নয়ত বা যান্ত্রিক গোলযোগ হয়ে হারিয়ে
গিয়েছিল। আসলে আমরা বাস্তবতা দিয়ে অন্ততঃ এই অশরীরী অস্তিত্বের বিষয়ে চিন্তা করতেই
চাই না। করতেও চেষ্টা করিনা। “
নিজেদের পরিচয় দাও
ডি ও এস , মানে ডিটেক্টিভ অফ সুপার ন্যাচারাল। খুঁজে বেড়াও ভুতেদের,খোজ কর কালা
জাদুর, আরো এরকম রহস্যে ঘেরা নানা বিষয়। যেটা এতদিন কেউ ভাবে নি ।
“ কথাটা ঠিক, আমরাই সেই অর্থে প্রথম বলে দাবি করতে পারি। আর
দাদাগিরির মঞ্চের পর আমাদের কাজের বিষয়টা অনেক মানুষ জেনেছেন। অনেকে ডাকছেন
আমাদের। আমরাও যাচ্ছি তাঁদের কাছে। কেউ কেউ আবার আমাদের কাজের সমালোচনা করে নানা
কথাও বলেছেন, আবার শুনেছি, এই সব ভ্রান্ত ধারণা ছড়ানোর জন্য আদালতের দ্বারস্থ
হয়েছেন তারা। কিন্তু তাঁদের উদ্দশ্যে একটা কথাই বলব, আমরা চেষ্টা করে চলেছি মানুষের
চিরকালের ভ্রান্ত ধারণাটাকে বাস্তবতার চোখ
দিয়ে দেখিয়ে দেবার। সেই ভ্রান্ত ধারনাকে প্রতিষ্ঠা করা নয়। “
বেশ অনেক ক্ষণ কথা বলার পর , বেহালা শিবরামপুরের ঐ আবাসন
থেকে যকন বেড়িয়ে আসছি, তখন মনে হল একটা বাস্তবতার হালকা হাওয়া আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন