বিহার নির্বাচন বিশেষ
জঙ্গলরাজের যুবরাজের পাল্টা জবাবে রাবণের সীলমোহর
কাজল ভট্টাচার্য, কলকাতা, অক্টোবর ২৮:
নীতিশ মন্ত্রীসভার আট মন্ত্রীর ভাগ্যপরীক্ষা হয়ে গেলো বুধবার।
বুধবার প্রথম দফার বিহার নির্বাচনে সকাল সকাল দিল্লি থেকে বিহারে উড়ে এলেন নির্বাচনের দুই স্টার ক্যাম্পেনার নরেন্দ্র মোদি, রাহুল গাঁধি। মোদির প্রথম গন্তব্য ছিলো, কবি জয়দেবের মিথিলাঞ্চলের দ্বারভাঙা। তারপর মজঃফরপুর ছুঁয়ে বিহারের রাজধানী শহর পাটনা। ওদিকে রাহুল পাড়ি দিলেন পশ্চিম চম্পারনের বাল্মিকী নগরে। সেখান থেকে সোজা দ্বারভাঙ্গার কুশ্বেশ্বর।
দ্বারভাঙ্গার মঞ্চে জোটসঙ্গী নীতিশ কুমারকে পাশে বসিয়ে, মৈথিলি ভাষাতেই বক্তব্য শুরু করলেন তিনি।
ভাষনের শুরুতেই করোনা নিয়ে হুঁশিয়ারি। তারপরেই আক্রমণ শানালেন কংগ্রেস নেতৃত্বের মহাজোটের মূল শরিক রাষ্ট্রীয় জনতা দলের তেজস্বী যাদবকে লক্ষ্য করে। সরাসরি নাম না করে 'জঙ্গলরাজের যুবরাজ' বলে বিঁধলেন তেজস্বীকে। মনে করিয়ে দিলেন লালু- রাবরী রাজের একের পর এক দুর্নীতির কথা। পরিবারের খাতায় হাজার কোটি টাকা জমা পড়া। রংদারি ট্যাক্স। দাবি মতো টাকা না দিলে অপহরণ।
পাশাপাশি চললো নীতিশ জমানার উন্নয়নের ফিরিস্তি। আইটি হাব থেকে নিয়ে পাটনা শহরের পিঠে গতির পালক গুঁজে দিতে মেট্রো রেলপ্রকল্পের কথা। দেওয়ালি ছট পর্যন্ত মাগনার রেশন।
জনসভা যখন মিথিলার বুকে, তখন মিথিলার জনকরাজার কথাতো উঠবেই। মোদির কটাক্ষ, অযোধ্যা রামমন্দির নিয়ে যাঁরা বারেবারে আঙুল তুলতেন, আজ তারাই বাধ্য হচ্ছেন তালি বাজাতে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রায় সেই একই সুর শোনা গেল অন্য দু'জায়গার জনসভাতেও।
"মিথ্যে কথা বলার প্রতিযোগিতায়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পেরে উঠবো না," বললেন রাহুল গাঁধি। নিজেকে সত্যবাদী যুধিষ্ঠিরের জায়গায় প্রতিষ্ঠা করার পরেই তাঁর পরের উক্তি, কংগ্রেস দেশ চালাতে জানে। পাশে দাঁড়াতে জানে দেশের কৃষক, শ্রমিক, বেরোজগারদের। তারপরেই মঞ্চে বসা জোটসঙ্গী তেজস্বীকে 'জঙ্গলরাজের যুবরাজ' বলার পাল্টা জবাবে মোদিকে কার্যত 'রাবণ' বানিয়ে ছাড়লেন রাহুল। তাঁর প্রশ্ন, দশেরাতে মানুষ রাবণের কুশপুতুল পোড়ায়। কিন্তু এবার পাঞ্জাবে মোদি, আম্বানি, আদানির কুশপুতুল পোড়ানো হলো কেন?
তেজস্বীর দশ লক্ষ কর্ম সংস্থানের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এনডিএ'র খোঁচার জবাবে রাহুলের বক্তব্য, মোদিজির মিথ্যাকথা মানুষ ধরে ফেলেছে। তাই মানুষের তাড়া খাওয়ার ভয়ে, এখন তাঁর মুখে দু'কোটি বেকারকে চাকরি দেওয়ার কথা শোনা যায় না। নীতিশ জমানায় বিহারের উন্নয়ন নিয়েও সরব হন রাহুল। তার স্পষ্ট কথা, রাজ্যকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, তার ছক কষা আছে তেজস্বীর কাছে।
পশ্চিম চম্পারনের বাল্মিকী নগর ছুঁয়েই রাহুল গাঁধি পৌঁছে গেলেন দ্বারভাঙ্গার কুশ্বেশ্বরে। দু'জায়গার জনসভাতেই তাঁকে দেখা গেল তীব্র মোদি বিরোধিতার মেজাজে। রাহুলকে ছেড়ে কথা বলেননি মোদিও। জবাব, পাল্টা জবাবে আজকের নির্বাচনী প্রচার জমজমাট হলেও চুপ থাকলেন নীতিশ কুমার।
এতদিন ছিলেন বিহারের সুশাসনবাবু। এবার তাঁর নতুন নামকরণ হলো, জেনারেল ডায়ার। গত সোমবার মুঙ্গেরকান্ডের খবর ছড়িয়ে পড়তেই ফুঁসে ওঠেন তেজস্বী যাদব, চিরাগ পাসোয়ানরা। গলা মেলায় কংগ্রেস। রাতারাতি নীতিশের গায়ে সীলমোহর দেগে দেওয়া হয় জালিয়ানয়ালা বাগ হত্যাকান্ডের কুখ্যাত জেনারেল ডায়ারের।
গত সোমবার মুঙ্গেরের দুর্গাপ্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রায় পুলিসের গুলিতে মারা যান এক তরুন। বেপরোয়া লাঠি চালানোয় জখম হন কমপক্ষে আরও ২৭ জন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানানো হয়, নীতিশ সরকারকে বরখাস্ত করার। বুধবারের জনসভায় বিরোধীদের সেই দাবি উড়িয়ে দেওয়ার কোনও চেষ্টাই করতে দেখা গেলো না এনডি জোটের বক্তাদের।
মঞ্চে মুখ না খুললেও নিউজ চ্যানেলের টক শোতে মুখ খুলেছেন বিজেপি প্রতিনিধি। আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, এনডিএ সরকার তৈরি করার পরেই দোষীদের কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করবে। এখন নির্বাচন কমিশনের আওতায় পুলিস প্রশাসন। তাই সরকার কিছু করতে পারে না। গোটা ঘটনার কথা তুলে কংগ্রেস, রাষ্ট্রীয় জনতা দলের মহাজোট রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন