আজকের বিশেষঃ চিনের আগ্রাসন
।। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে পড়ার চক্রান্ত চিনের ।।
কাজল ভট্টাচার্য , কলকাতা
দুষ্টের ছলের অভাব হয় না।
আর যদি সেই দুষ্টের নাম হয় চিন, তাহলে তো সর্বনাশ। তারপর আবার তার দোসর পাকিস্তান। অজগরের মতো এক বিশালকায় রাস্তা দিয়ে, চিন ঘিরে ফেলতে চাইছে ভারতকে। ওই রাস্তা একবার তৈরি করে ফেলতে পারলেই বাজিমাত। একেবারে কাছাকাছি চলে আসবে চিন আর পাকিস্তান। ভারতের চিরকালীন দুই শত্রু প্রতিবেশী দেশ। তারপরের গল্পটা সহজেই অনুমেয়।
চিনের প্রথম কাজ হবে সিকিম, আসামে, বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলিকে উসকে দেওয়া। সেই সঙ্গে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র তুলে দিতে হবে পাকিস্তানের হাতে। প্ররোচিত করতে হবে কাশ্মীরের দখল নেওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে। কাশ্মীর বাঁচাতে ভারত যখন ব্যস্ত ঠিক তখনই, ঝড়ের গতিতে লালফৌজ হানা দেবে 'দক্ষিণ তিব্বতে'(অরুণাচল)।
আর যদি সেই দুষ্টের নাম হয় চিন, তাহলে তো সর্বনাশ। তারপর আবার তার দোসর পাকিস্তান। অজগরের মতো এক বিশালকায় রাস্তা দিয়ে, চিন ঘিরে ফেলতে চাইছে ভারতকে। ওই রাস্তা একবার তৈরি করে ফেলতে পারলেই বাজিমাত। একেবারে কাছাকাছি চলে আসবে চিন আর পাকিস্তান। ভারতের চিরকালীন দুই শত্রু প্রতিবেশী দেশ। তারপরের গল্পটা সহজেই অনুমেয়।
চিনের প্রথম কাজ হবে সিকিম, আসামে, বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলিকে উসকে দেওয়া। সেই সঙ্গে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র তুলে দিতে হবে পাকিস্তানের হাতে। প্ররোচিত করতে হবে কাশ্মীরের দখল নেওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে। কাশ্মীর বাঁচাতে ভারত যখন ব্যস্ত ঠিক তখনই, ঝড়ের গতিতে লালফৌজ হানা দেবে 'দক্ষিণ তিব্বতে'(অরুণাচল)।
২০১৩ সালের জুন মাস। ভারতকে শায়েস্তা করার উপায় জানিয়েছিল 'wen wei po', বেজিং পক্ষধারী হংকয়ের এক দৈনিক। ব্যাস, তাহলেই চোখে তারা দেখবে দিল্লি। একদিকে কাশ্মীর আর একদিকে অরুণাচলপ্রদেশ, দুদিকের লড়াই সামাল দিতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়বে ভারত। ফল দাঁড়াবে মারাত্মক। 'দক্ষিণ তিব্বত' দখল করে হারানো মর্যাদা ফিরে পাবে চিন। আর গোটা কাশ্মীর চলে যাবে পাকিস্তানের হাতে। এই রণকৌশল নিয়ে না এগোলে, 'দক্ষিণ তিব্বতে' সরাসরি লালফৌজের ঝাঁপিয়ে পড়া ছাড়া উপায় নেই।
যে রাস্তা বানিয়ে ভারতকে প্যাঁচে ফেলতে চাইছে চিন, খাতাকলমে তার নাম 'চায়না পাক ইকোনমিক করিডোর'। হিমালয়ের বুক চিড়ে ঝাঁ চকচকে এক চওড়া, আধুনিক রাস্তা। চিনের শিনজিয়াং থেকে শুরু, বালুচিস্তানের গোয়াদর বন্দরে গিয়ে শেষ। মধ্যে ছুঁয়ে যাবে করাচি বন্দরকেও। মোট তিনহাজার দুশো কিলোমিটারের এই রাস্তাকেই বলা হচ্ছে চায়না- পাক ইকনোমিক করিডোর। রাস্তা তৈরিতে খরচ ধরা হয়েছিল ছেচল্লিশ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু আজ তা বেড়ে সাতাশি বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে বলে খবর।
করিডোর তৈরি নিয়ে ভারতের যাবতীয় আশঙ্কাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে বেজিং।
বেজিং কর্তাদের আপাত নিরীহ বক্তব্য, করিডোরের একমাত্র উদ্দেশ্য বাণিজ্যিক লেনদেন বাড়ানোর ব্যবস্থাকে মসৃণ করে তোলা। ইউরেশিয়ার দেশগুলিতে পণ্য আমদানি, রপ্তানি করা অনেক সহজ হবে। প্রসঙ্গত এখন বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়ার বাজারে পৌঁছতে চিনের ভরসা দক্ষিণ চিনসাগর, মালাক্কাপ্রণালী হয়ে সমুদ্রপথ। যার দূরত্ব কমবেশি দশ হাজার কিলোমিটার। করিডোর তৈরি হয়ে গেলেই দূরত্ব একধাক্কায় অনেকখানি কমে যাবে। এপর্যন্ত তো নাহয় ঠিক আছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো ওই রাস্তা এগোবে কোন পথে? চিনের শিনজিয়াং থেকে যাত্রা শুরু করে ওই করিডোর কারাকোরাম পাস পেরিয়ে ঢুকে পড়বে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের গিলগিট বাল্টিস্তানে। সেখান থেকে সোজা পাকিস্তানে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ওপর দিয়ে চিনের ওই ইকনোমিক করিডোরের যাওয়াতেই আপত্তি ভারতের। এব্যাপারে কড়া প্রতিবাদও জানানো হয়েছে। গোটা কাশ্মীর উপত্যকাই যে বাস্তবে ভারতের, শি জিনপিং সরকারকে আরও একবার তা মনে করিয়ে দিয়েছে মোদি সরকার।
চিনের 'ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড' পরিকল্পনার বিশেষ অঙ্গ ওই চায়না- পাক ইকনোমিক করিডোর। ওই করিডর ধরে চিনের রপ্তানির জিনিস পৌঁছে যাবে পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দরে। কিন্তু এই করিডোরে পাকিস্তানের কী লাভ, প্রশ্ন উঠেছে সেই দেশেই। কারণ ইতিমধ্যেই চিন থেকে পাকিস্তান যে পরিমাণ আমদানি করে, রপ্তানি তার তুলনায় অনেক কম। পাকিস্তানের বাজার একচেটিয়া ভাবে দখল করে বসেছে চিন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, করিডোরের সুযোগ নিয়ে পাকিস্তানের গোটা বাজারের দখল নেবে চিন।
সাতবছর আগে ২০১৩ সালেই করিডোর তৈরির ঘোষনা করেছিল চিন। শি জিনপিং, তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সরকারের মধ্যে চায়না- পাক ইকনমিক করিডরের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়। প্রকল্পের কাজ শুরু হয় দু'বছর পর ২০১৫ সালে। দুর্গম পাহাড়ের মধ্যে সড়ক তৈরির কাজে নজরদারি চালানোর ব্যবস্থা হয় উপগ্রহের মাধ্যমে। এই করিডোর জিনপিংয়ের সিল্ক রোড ইকনোমিক বেল্ট এবং মারিটাইম সিল্ক রোড উন্নয়ন প্রকল্পেরই রূপায়ন।
দিল্লি সতর্ক হয়ে গেছিল চিন পাক ইকনোমিক করিডোরের ঘোষনা হতেই। ওই করিডোর তৈরি হলেই ভারতের দুই চিরশত্রু প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান আর চিন চলে আসবে সামনাসামনি। সরাসরি সড়ক যোগাযোগের রাস্তা খুলে যাবে দুই দেশের। স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাবে ভারতের বিপদ।
বিপদের স্পষ্ট সঙ্কেত পেতে দেরি হয়নি। করিডোরের কাজ শুরু হতেই নজর কাড়ে একলাফে বেড়ে যাওয়া চিন, পাকিস্তানের সামরিক সখ্যতা। ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ। পাক দিবস উপলক্ষে ইসলামাবাদে পাক সেনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্যারেড করে লালফৌজ। চিনের ইতিহাসে এমন ঘটনার নজির ছিলো না। দেশের বাইরে কোনও দিনই কোনরকম প্যারেডে অংশ নেয়নি চিনা সেনা। পাশাপাশি আরও এক চক্রান্তের ঘুঁটি সাজাতে শুরু করে পিপলস লিবারেশন আর্মি। পাকিস্তানের স্থানীয় মানুষদের নামে নামকরণ করে বিভিন্ন জায়গায় মোতায়েন করা হয় প্রায় তিরিশ হাজার সেনা। পরিকল্পনা করা হয়, পরবর্তীতে ওই সেনাদের পাক অধিকৃত কাশ্মীর আর করিডোর তৈরির কাজে সুরক্ষা বেষ্টনি তৈরি করার কাজে লাগানোর।
জানা যায়, গোয়াদরে পাক নৌসেনার জাহাজের পাশেই থাকবে চিনের যুদ্ধজাহাজ। বন্দর আর বাণিজ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই ওই ব্যবস্থা বলে বন্দর কর্তৃপক্ষের যুক্তি। ওদিকে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কাতেও একই পরিকল্পনা করেছে বেজিং।
করিডর চুক্তির পরেই চিন পাক সম্পর্কে নয়া রং লাগার ঘটনা চোখ এড়ায়নি ভারতের। ইসলামাবাদে চিন- পাকসেনার যৌথ কুচকাওয়াজ, ভারতের পশ্চিম সীমান্তে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে চিনসেনার উপস্থিতিতেই চক্রান্তের ছবি স্পষ্ট। ওদিকে আবার গোয়াদরে চিনা নৌসেনা ঘাঁটি, করাচিতে প্রশিক্ষণ, আটটা সাবমেরিন পাকিস্তানকে দেওয়া ভারতের জন্য অবশ্যই চিন্তার কারণ। গোটা ঘটনায় স্পষ্ট পূর্ব এবং উত্তর সীমান্তের মারিটাইম বর্ডারে দুপক্ষের বিবাদ নিয়ে ভারতকে অন্য রণকৌশলের কথা ভাবতে হবে। পাশাপাশি প্রস্তুত থাকতে হবে চিনসীমান্তে যে কোনও চ্যালেঞ্জের কড়া জবাব দেওয়ার জন্য। বিপদ কখন কোন দিক থেকে হানা দেয়, তার পূর্বাভাস সবসময় নাও মিলতে পারে।
(সৌজন্য: হিন্দুস্তান টাইমস/ ব্রিটানিকা/ইনডিয়া ডিফেনস রিভিউ ডটকম/আলজাজিরা ডটকম)
দারুণ বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন। ভাল লাগল।
উত্তরমুছুন