দিন প্রতিদিন বিশেষ

 

আজকের বিশেষঃ সবুজ মনের অবুজ খবর 




। ডেটিংয়ে কদর বেশি লম্বা ছেলেদেরই ।








কাজল ভট্টাচার্য, কলকাতাঃ

(লম্বা মানেই অ্যাডভান্টেজ। পায়াভারী। কিন্তু খাটোরাও অবহেলার নয়। বয়ফ্রেন্ডের গলাতেই যদি মালা পরানোর ইচ্ছে থাকে, তাহলে বেটেরাই কিন্তু বিশ্বস্ত। সমীক্ষা সফল স্বামীর দৌড়ে, বেটেদেরই এগিয়ে রেখেছে।)


একেবারে হ্যাটা করবেন না।

ওই বেটে পুরুষরাও কিন্তু একেবারেই কম যায় না। নেপোটিজম নিয়ে জোর চেল্লাচেল্লি চলছে। বেটেরাও কিন্তু গলা তুলতে পারে। সমীক্ষা অনেকদিন আগেই লম্বা পুরুষ, মহিলার নেপোটিজম স্বীকার করে নিয়েছে। সবার অলক্ষ্যে তা চলছে গোটা দুনিয়া জুড়ে। 

সারা দুনিয়াতেই এক অদৃশ্য বিদ্বেষ। লম্বা আর খাটোর।

লম্বা পুরুষদের গলায় লাগাবো। তাদের কাছেই নিজেকে সপে দেব। প্রেম, ডেটিংয়ের বাজারে লম্বু ছেলেদের কদর বেশি। তাই এই ছেলেরাও ভাবে, তারাই সেরা। কিন্তু প্রেম টিকিয়ে রাখতে বেটেরাই চ্যাম্পিয়ন। প্রেমিক হিসেবে লম্বুদের বিশ্বস্ততা কম। 

ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইকনোমিক রিসার্চের লিড অথার অ্যাবিগেইল উইটজম্যান এরকমটাই জানিয়েছিলেন।

সুন্দরীরা আয়নার সামনে দাঁড়ান। তারপর নিজেদেরকেই জিজ্ঞেস করুন- কী চান। যদি আপনার পছন্দ হয় ঘরকন্না করা, তাহলে লম্বা বয়ফ্রেন্ড বাতিল করুন। আর যে মহিলারা ঘরের কাজে সুখ পান না, তাঁরা অবশ্যই লম্বা পুরুষের দিকে হাত বাড়ান। সকালে বাথরুমে ঢোকার আগেই হাবি আপনার মুখের সামনে তুলে ধরবে মর্নিং টিয়ের কাপ। বাথরুম থেকে ফিরেই পছন্দের গরমাগরম ব্রেকফাস্ট। বললে, হয়তো হোমমেড টিফিনও নিয়ে যেতে পারেন অফিসে। 

লম্বু পুরুষরাই গৃহস্থালির কাজ করে বেশি সুখ পান। ঘরদোর ঠিকঠাক রাখতে খাটাখাটিতে আপত্তি নেই। ওভাবেই তাঁরা তাদের পৌরুষত্বের হাতেকলমে প্রমাণ দেন। 


বেটে পুরুষরা থাকুক সেই মহিলাদের জন্য যাঁরা দশটা বাজলেই অফিস ছুটতে পছন্দ করেন না। কারণ বেটে পুরুষদের পছন্দ বাইরের জগতটা। তাদের পৌরুষত্ব দেখানোর আদব কায়দাটাও আলাদা। কাজকর্ম, ব্যবসা বাণিজ্য করে মোটা অর্থ উপার্জন করে তাঁরা সুখ পান। উচ্চতার অভাব পূরণ করতে চান রোজগারে। অন্যদিকে লম্বাদের অল্প রোজগারেই শান্তি। গিন্নির চেয়ে বেশি না হয়ে সমান সমান হলেই চলবে। 

কিন্তু সংসারধর্মে পৌঁছতে হবে তো প্রেমপর্ব পেরিয়ে। ডেটিংয়ের বাজারে লম্বা ছেলেদেরই কদর। সমীক্ষা কী বলে দেখা যাক।

লম্বা ছেলে মানেই তাকে ভরসা করা যায়। সমীক্ষা বলছে মেয়েদের মনের কথাটা এমনই। রাস্তাঘাটে কেউ কনুইবাজির ধান্দা বা গা ঘেঁষতে গেলেই, কলার ধরে কানের নীচে জমিয়ে এক থাপ্পর। ওটা লম্বা ছেলেদেরই কর্ম। বেঁটেদের সেই মুরোদটাই নেই। কিন্তু বেটেরাও তো রীতিমতো তাগড়া হয়। তাদের এক ঝাড়েই কাত হয়ে যেতে পারে লম্বুরা। তবু ভবি ভোলবার না। তার লম্বাই চাই। সেই হবে তার অমিতাভ বচ্চন। বয় ফ্রেনড কাম বডি গার্ড। 

আসলে মুখে যতোই নারীবাদের খই ফুটুক না কেন, মনের ভেতর ঘর করে আছে ভয়। নিরাপত্তার অভাববোধ। তাই শুধুই বয়ফ্রেন্ড হলে চলবে নাতো। নইলে হয়তো বেটেদের কথাও একবার ভাবা যেত। কিন্তু ব্যাপারটা যখন টু ইন ওয়ান, বডি গার্ডের কাজটাও করতে হবে ওই বয় ফ্রেন্ডকেই, তখন বেটেদের কথা বিবেচনা করা যেতে পারে কীভাবে? সোহাগ করবে আর রক্ষা করতে পারবে না, তা আবার হয় নাকি? 

কিন্তু মানুষটা যদি হতো পাঁচফুট সাতইঞ্চির নেপোলিয়ান বোনাপার্ট? সলমান শাহরুখরাও কিন্তু ওই বেটের দলেই পড়ে। মেয়েদের হার্ট থ্রব টম ক্রুজ এরমধ্যেই ব্যতিক্রমী। 


আর ওসব হাসিখুশি, ছটফটে ছেলেরা তো সুন্দরীদের কাছে ফকরা, ফক্করবাজ। মজা করলে জোকার। হাসির রাজা চার্লি চ্যাপলিন কিন্তু ওই বেটের দলেই পড়তেন। আবার আমাদের ইমরান হাসমি, রণবীর সিংও তাঁদের পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চির শরীরটা দিয়েই কামাল করে দিলেন। তবে সবই সিলভার স্ক্রিনে। বাস্তবে মেয়েদের মনের কথা, ওসব দিয়ে কী হবে? বরং ওই মন্দেরাই ভালো। বেশ মুডি, কাউকে পাত্তা দেয় না, নাকউঁচু। তেজী ঘোড়ায় চড়ে আরাম। ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সমীক্ষায় এরকমটাই বলা হয়েছিল।

আসলে আমাদের মনে একটা ধারনা গেঁড়ে বসে আছে, লম্বা হলেই ব্যক্তিত্বে চার চাঁদ। ডমিনেট বা সোজাকথায় দাদাগিরিতে সুবিধা। তাই বয়ফ্রেন্ড হোক বা হাসব্যান্ড, বেশিভাগ মেয়েরই ওরকম দাপুটে পুরুষের স্বপ্ন দেখে। কিন্তু মুশকিল হয়, যখন হাওয়ামোরগের দিক ঘোরে। সেই পছন্দের পুরুষটি যখন তার গার্লফ্রেন্ড বা স্ত্রীর ওপরেই দাপট দেখাতে যায়। তখন সেই মেয়েদের অবস্থাটা দাঁড়ায়, ছেড়ে দে মা, পালিয়ে বাঁচি। সমীক্ষাও সেকথাই বলছে। লম্বা পুরুষদের ব্রেক আপ, ডিভোর্সের সংখ্যা বেশি। 

সেদিক থেকে বেটেরা অনেক ক্ষেত্রেই দাপটহীন, মাটির মানুষ। তারওপর তারা এও জানে বেটেদের জায়গা

মহিলাদের অপছন্দের তালিকায়। তাই এরা সম্পর্ক রক্ষা করতে সামলে সুমলে চলে। সহনশীল। তা বলে তাদের পছন্দ, অপছন্দ নেই, মোটেও সেরকম নয়। বয়সে ছোট মেয়েই পছন্দ। আর লম্বায় মাথায় মাথায় হলেই উত্তম। তবে এক- দু ইঞ্চি বেশি হলেও চলবে। স্কুল কলেজের কটা পাশ, তাও গুরুত্বের না।


তবে লম্বারা পছন্দ করে শিক্ষিত মহিলা। বয়সে বড় হলেও চলবে। এক কথায়, ওদিকে লম্বারা চায় সমানে সমানে পাল্লা দিতে। 


আসলে অদ্ভুত কিছু বাজে চলতি ধারনা নিয়েই জীবন কাটে। দাপটের সঙ্গে মানুষের উচ্চতার সত্যিই কি কোনও সম্পর্ক আছে? পাঁচফুট চারইঞ্চির মহাত্মা গাঁধি, আর পাঁচ সাতের উইনস্টন চার্চিল, এঁদের দাপট তো বিশ্ববন্দিত। রাজনীতি থেকে সরে আসুন সিনেমার পর্দায়। আমির পাঁচ পাঁচ, সলমন একইঞ্চি বেশি আবার তারচেয়ে আরও একইঞ্চি বেশি শাহরুখ খান। মানে কেউই লম্বার মধ্যে পড়েন না। 

আর সম্পর্কে ব্রেক আপ, ডিভোর্স, তার আরও হাজার গন্ডা কারণ থাকে। ছয় দুইয়ের অমিতাভ বচ্চন তো দিব্য পাঁচ দুইয়ের জয়া ভাদুড়ির সঙ্গে জীবন কাটাচ্ছেন। আসলে হাতেগোনা কিছু ঘটনা বাদ দিলে, শেষ কথা বলে সমাজে প্রতিষ্ঠা। স্টেটাস। সাফল্যের স্কেলে লম্বা হয়ে যায় বেটে, আর বেটে হয় লম্বা। এটাই দস্তুর। 


(ঋণ স্বীকার: সাইকোলজি টুডে এবং দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট)

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন